সূর্যোদয় প্রতিবেদক
শিক্ষক কর্মচারীদের কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছে শিক্ষকেরা। ষড়যন্ত্রের শিকার দাবি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের।
২০২২ সালে যোগদানের পর থেকেই চিকিৎসা, মাতৃকালীন ও সাধারণ ছুটিতে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে শিক্ষকেরা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন।
জানা গেছে, ২০২৩/২৪ অর্থ বছরে ২৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২ লাখ টাকা করে ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য বরাদ্দ দেয়া হলেও প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নিকট হতে ১০ হাজার টাকা করে উৎকোচ গ্রহণ করেন। উপজেলার ১৬২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক প্রাথমিক ১০ হাজার টাকা বরাদ্দ পায়। সেই টাকা ব্যাংক একাউন্টে পাঠানোর কথা থাকলেও নব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসান সেই টাকা বিতরণ করেন। বিতরণকালে প্রতিটা স্কুল প্রতি ৩৯০ টাকা করে কেটে রেখে দেন বলে জানা যায়।
পাকুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক নাহিদা আক্তারের চিকিৎসা ছুটির মঞ্জুর করার জন্য ৫ হাজার টাকা উৎকোচ ও উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম প্রহরীদের বেতন বিলে স্বাক্ষরের জন্য ১২ হাজার টাকা উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষকদের ঢাকায় যাওয়ার নামে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি, সরকারি মোটরসাইকেল ব্যবহার না করে ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি ও ২০২৪ সালে জানুয়ারিতে কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ ক্রয়, মেরামত ও মনিহার দ্রব্য ক্রয়ের নামে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ভুয়া বিল তৈরি করে আত্মসাধের অভিযোগ উঠেছে।
বাহাগুন্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মাসুদ রানা বলেন, শিক্ষা অফিসারের যোগদানের পর থেকেই কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করেন না, নিজের নিয়ম চালু করেছেন। অফিসিয়াল যত টাকা-পয়সা ব্যাংক হিসেবে দেওয়ার কথা থাকলেও সেগুলো না করে নিজের ইচ্ছামতো উত্তোলন করে নিজের অংশ রেখে প্রধান শিক্ষকদের হাতে তুলে দেন।
ধানখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরী কাম প্রহরী আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে থেকে বেতন বিলে স্বাক্ষরের জন্য ১২ হাজার টাকা ঘুষ নেন। টাকা দিলে বেতন দিলে স্বাক্ষর করবে না বলে জানিয়ে দেন নাসির উদ্দিন স্যার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন সহকারী শিক্ষক জানান, চিকিৎসা জনিত ছুটির জন্য বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলে এটিও স্যার কে ৫-১০ হাজার টাকা না দিলে ছুটি মঞ্জুর করেন না। টাকা না দিলে দিনের পর দিন হয়রানির শিকার হতে হয়। একপ্রকার বাধ্য হয়ে টাকা দিতে হয় এটিও স্যারকে। বিষয়গুলো গণমাধ্যমের সামনে প্রচার করা হলে বিভিন্ন সময় শিক্ষা অফিসের লোকজন দিয়ে হয়রানি করা হয়। তাই ঘরে মুখ খুলতেও পারি না।
নব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসান বলেন, প্রাক প্রাথমিকের টাকা ব্যাংক একাউন্টে দেওয়ার কথা থাকলেও নাসির উদ্দিন স্যারের কথামতো আমরা শিক্ষকদের হাতে তুলে দিয়েছি। এ ক্ষেত্রে ভ্যাট আইটি কেটে নেওয়া হয়েছে। সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৩৯০ ওই টাকা কেটে নেওয়া বিষয়টি সত্য না, ১৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ৪০ টাকা করে নেয়া হয়েছে। কেন টাকা নেয়া হলো এ বিষয়ে কোন সদউত্তর দেননি তিনি।
গাংনী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নাসির উদ্দিন বলেন, আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরের যে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে সেটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তিনি অর্থনৈতিক লেনদেনের সাথে জড়িত না বলে দাবি করেন।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা বলেন, এখন পর্যন্ত আমার কাছে কেউ লিখিত ও মৌখিকভাবে অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্যঃ ২০২২ বরগুনার সদর উপজেলা থেকে কোটি টাকা দুর্নীতির ও পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। এরপর তিনি মেহেরপুরে গাংনীতে যোগদান করেন।