Home » কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ভন্ড কবিরাজের খপ্পরে হাজারো মানুষ

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ভন্ড কবিরাজের খপ্পরে হাজারো মানুষ

কর্তৃক আবুল কাসেম অনুরাগী
সূর্যোদয় প্রতিবেদক 103 ভিউ
Print Friendly, PDF & Email

 

 

পাঁচ পোয়া চাল আর নগর অর্থ দিলেই মিলবে সব রোগ থেকে মুক্তি। কথাটি আচার্য হলেও,  এমনি কথা বলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে শাপলা নামে এক ভন্ড মহিলা কবিরাজ। তিনি জিনের কথা বলে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ভন্ড কবিরাজ শাপলা খাতুন (৩০) কুমারখালী সদকী ইউনিয়নের করাদকান্দি গ্রামের আতিয়ার এর স্ত্রী বলে জানা যায়। এই  ভন্ড মহিলা কবিরাজের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হচ্ছেন হাজারো মানুষ, এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর। এ ঘটনায় প্রতারণার স্বীকার লোকজনসহ এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীরা জানান,  শাপলা দীর্ঘদিন যাবৎ সংসারে অশান্তি, স্বামী-স্ত্রীর দ্বন্দ্ব, বন্ধ্যাত্ব, মহিলাদের পেটে কি বাচ্চা আছে তা বলে দেওয়া, পছন্দের মানুষকে পাইয়ে দেওয়া, অবাধ্য সন্তানকে নিয়ন্ত্রণে আনা, প্যারালাইসিসসহ নানাবিধ সমস্যার সমাধান দিয়ে আসছেন। এ কাজে তার কাছে থাকা জ্বিন তাকে সহযোগিতা করে বলে তিনি রোগীদেরকে বোঝান। এসব ক্ষেত্রে তিনি প্রতারণার অংশ হিসাবে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার বিকেল থেকে নিজ বাড়িতে আসন বসান। এসময় বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে যারা আসেন তাদের কারো বাড়িতে শত্র“তাবশত তাবিজ, কারো বাড়িতে শামুক বা গাছ পুঁতে রাখা আছে এবং এ কারণেই বিভিন্ন সমস্যায় ভূগছেন বলে জানান তিনি। একই সঙ্গে জ্বিনের সাহায্যে এসব তাবিজ বা গাছ তুলে এনে সমস্যার সমাধান করে দেয়ার আশ্বাস দেন। এজন্য তিনি পাঁচ পোয়া চাল এবং ৩০০ টাকা ফি নেন। এরপর বাড়ি বন্ধ করার জন্য ইচ্ছে মতো টাকা নেওয়া সহ তাবিজ দেয়ার জন্য হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। স্থানীয় জসিম নামে এক যুবক বলেন, পানি পড়ে কুকুর দিয়ে শুকানো হয় এবং সেই পানি মানুষ কে খাওয়ানো হয়। কুরআন শরীফ এর আয়াত লিখে মানুষ কে দিয়ে টাকা নিচ্ছে। জ্বিনের মাধ্যমে তাবিজ-কবজ দেওয়া কথা বলে মানুষের কাছ থেকে  লাখ-লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই বিষয়ে ভূক্তভোগীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি চিকিৎসা নিতে যাওয়া  আনোয়ার হোসেন জানান, আমি একটি বিষযে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলাম। চিকিৎসা হিসাবে টাকার বিনিময়ে আমাকে একটি তাবিজ দেন, কিন্তু কিছুই হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি  জানান, স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে লোকমুখে শুনে শাপলা কবিরাজের কাছে চিকিৎসা নিতে যাই। এসময় আমার বাড়িতে প্রতিপক্ষের পুঁতে রাখা তাবিজ তুলে দেয়া এবং আমার শরীর বন্ধ করার তাবিজ বাবদ বেশ কিছু টাকা নেন। কিন্তু কোন রকম কাজ না হওয়ায় আমি তাবিজ খুলে দেখি তার ভিতরে কিছুই নেই, শুধু মোম দিয়ে আটকানো। একই গ্রামের  মমিনুল জানান, শাপলা চিকিৎসা পদ্বতিতে আমার মনে সন্দেহ হলে আমি তার আসন পদ্ধতিটি গভীরভাবে খেয়াল করি। এসময় দেখি যে, শাপলা তার শাড়ির আঁচলের মধ্যে লুকিয়ে রাখা একটি কৌটা থেকে তাবিজ, শামুক বা গাছের শিকড় সামনে ছুঁড়ে দিচ্ছেন এবং এগুলো রোগীদের বাড়ি থেকে জ্বিন উঠিয়ে এনে ফেলছে বলে জানাচ্ছেন। এ ব্যাপারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শাপলা খাতুন অনেক গুলো মহিলা নিয়ে বসে আছে । তিনি বলেন আমি দীর্ঘ ১০ বছর যাবত জিনের মাধ্যমে মানুষের সমস্যা সমাধান করছি। প্রতি সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত ১০ পর্যন্ত কাজ করে থাকি। এক জন রুগির জন্য পাঁচ পোয়া চাল ও নগর টাকা দিলেই আসন দেওয়া হয় এবং সেই রুগিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। এই বিষয়ে শাপলা কবিরাজের স্বামী আতিয়ার এর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমার স্ত্রী দীর্ঘ দিন ধরে জিনের মাধ্যমে মানুষকে চিকিৎসা দিয়ে আসছে। এখানে চিকিৎসা নিতে হলে পাঁচ পোয়া চাল ও নগর ৩ শ’ টাকা দিতে হয়। বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এখানে আসে। কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার  পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রাসেল আল মামুন বলেন, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে শুনতে পেলাম। এটা মানুষের সঙ্গে  প্রতারণা করা হচ্ছে। এই বিষয়ে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কুমারখালী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিরুল আরাফাত জানান, এই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

 

 

 

০ কমেন্ট

রিলেটেড পোস্ট

মতামত দিন