Home » মেহেরপুরে তাহের ক্লিনিকের চিকিৎসা চিত্র-১

এনেসথেসিয়া ও সার্জারি একাই করেন ডাঃ তাহের।

মেহেরপুরে তাহের ক্লিনিকের চিকিৎসা চিত্র-১

কর্তৃক আবুল কাসেম অনুরাগী
সূর্যোদয় প্রতিবেদক 89 ভিউ
Print Friendly, PDF & Email
নিজস্ব প্রতিবেদক :
ডাঃ মোঃ  আবু তাহের সিদ্দিকী। একজন এমবিবিএস চিকিৎসক। অস্ত্রপচার বা অপারেশন করবার জন্য  কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই তাঁর। বাংলাদেশ সরকারের  স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী অপারেশনের জন্য নেই কোনো  বৈধ প্রশিক্ষণ। অথচ তাঁর  ক্লিনিকে সবধরনের সিজারিয়ন অপারেশন করে থাকেন তিনি। অবৈধভাবে দীর্ঘদিন  তিনি রোগীর অপারেশনের মত জটিল একটি কাজ করলেও স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো মাথা ব্যাথা নেই।
অপচিকিৎসায় প্রাণ হারাচ্ছেন রোগী অথচ স্বাস্থ্য প্রশাসন উদাসিন। প্রশাসনিকভাবে কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হয়না কখনো তার বিরুদ্ধে। ফলে এলাকার অসংখ্য রোগীর মৃত্যু হচ্ছে অথবা চিরদিনের জন্য পঙ্গু হচ্ছেন তার অপচিকিৎসায়। চিকিৎসাসেবার নামে এই চিকিৎসক ক্লিনিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেছেন। সেবার পরিবর্তে অর্থের পেছনে ছুটছেন তিনি। প্রতিনিয়ত সরকারি হাসপাতাল থেকে দালালদের মাধ্যমে রোগীকে নিজের ক্লিনিকে ভাগিয়ে নিয়ে আনেন তিনি।
সরেজমিনের দেখা গেছে তার ক্লিনিকে  পুরনো ও নিম্নমানের যন্ত্রপাতি, অদক্ষ সেবিকা,অদক্ষ  টেকনিশিয়ান ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকলেও প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে দিব্যি রমরমা ব্যবসা করছেন তিনি।  মেহেরপুরে তাহের ক্লিনিক-১ ও গাংনী উপজেলা শহরে তাহের ক্লিনিক-২ নামে ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার সদর্পে চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
অভিযোগ উঠেছে, ক্লিনিক স্থাপনের কোনো আইন না মেনেই সিভিল সার্জনকে ‘ম্যানেজ’ করেই এই দুটি ক্লিনিক গড়ে উঠেছে। অভিযোগ আছে মেহেরপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ অলক কুমার দাস এবং গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুপ্রভা রাণীও ম্যানেজ হয়ে আছেন একই কায়দায়।
আরও অভিযোগ উঠেছে ডা. আবু তাহের শুধুমাত্র মেডিকেল অফিসার হলেও ক্লিনিকে বসে সব ধরনের অপারেশন করে থাকেন। যদিও একজন এনেসথেসিয়া চিকিৎসক দিয়ে অপারেশনের আগে রোগিকে অজ্ঞান করার কথা। কিন্তু ডা. মোঃ আবু তাহের সিদ্দিকী এনেসথেসিয়ার কাজটিও নিজেই করে থাকেন। নিয়ম অনুযায়ী অপারেশন থিয়েটারে একজন সার্জন, একজন এনেস্থিসিওলজিস্ট, প্রয়োজীয় সংখ্যক মেডিকেল অফিসার ও সিনিয়র নার্স থাকার কথা। কিন্তু এক্সপার্ট রাখলে তাদের সম্মানী দিতে হবে। টাকা ভাগ হয়ে যাবে। বিধায় অপারেশন থিয়েটারে তিনি একাই সব দায়িত্ব পালন করেন। যা মানুষের জীবন নিয়ে নিতান্তই হঠকারিতা।
 ক্লিনিকে সেবিকাদের ডিপ্লোমাধারী সনদ থাকার কথা থাকলেও ওই ক্লিনিকের সেবিকা নেই। ক্লিনিকে লক্কড়-ঝক্কড় ১০০ এমএল এক্স-রে মেশিন দিয়ে চলছে এক্স-রের কাজ। এক্স-রে টেকনিশানও অদক্ষ।  টেকনিশিয়ান আহম্মেদ হুসাইনের কোনো বৈধ একাডেমিক সনদ নেই।  অথচ নামমাত্র বেতনে অনেকদিন ধরে চাকরি করে আসছেন তিনি।
অদক্ষ প্যাথলজি টেকনিশিয়ান দিয়ে বিভিন্ন টেস্ট করা হয় এখানে।
এদিকে, ডা. আবু তাহেরের ভুল অপারেশনের শিকার হয়ে গাংনী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বেশ কয়েকজন মারা গেছেন। এছাড়া অনেকে এখন পঙ্গু জীবনযাপন করছেন।
২০১৩ সালে গাংনী তাহের ক্লিনিক- ২ এ মায়া খাতুন (৩৩) পিত্তথলিতে পাথর অপারেশনের পর মারা যান। মায়ার পিতা রেজাউল হক জানান, ডাক্তার আবু তাহেরের ভুল অপারেশনের কারনে তার মেয়ে মায়ার মৃত্যু হয়।
২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তাহের ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসার বলি হন মেহেরপুর সদর উপজেলার গোভিপুর গ্রামের মৃত হারান হাল সানার ছেলে আব্দুল খালেক (৫০)। ঐ ঘটনায় রোগীর স্বজন ও ক্ষুদ্ধ জনতা ক্লিনিক ভাংচুর করে । এ ঘটনায় নিহতের মেয়ে পারিভন খাতুন অভিযোগ করে বলেছিলেন, ডা. তাহের নিজেই অজ্ঞান করা ইনজেকশন দিয়ে তার বাবাকে মেরে ফেলেছে।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বনানীপাড়ার ফরিদুল ইসলাম হৃদয়ের স্ত্রী  জেসমিন খাতুনের একদিনের নবজাতক এক শিশুর তাহের ক্লিনিকের মালিক ও চিকিৎসক ডাঃ তাহের অপারেশন করে মলদ্বারের পথ তৈরি করতে গিয়ে শিশুর প্রসাবের নালি কেটে ফেলেন। ফলে নবজাতকের স্বাভাবিক মূত্রনালী দিয়ে যে প্রসাব হচ্ছিলো, সেটা মলদ্বার দিয়ে হচ্ছিল। ভুল অপারেশনের কারণে মলদ্বারেও মারাত্মক ইনফেকশন হয়ে শিশুটির জীবন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। পরে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন নবজাতককে  দেখে ঢাকা পিজি হাসপাতালে রেফার করেন। (চলবে। ২য় পর্বে থাকবে সাইফুন নাহারের মৃত্যু রহস্য)
০ কমেন্ট

রিলেটেড পোস্ট

মতামত দিন