Home » ভাটপাড়া নীলকুঠি থেকে আজকের ইকোপার্ক

ভাটপাড়া নীলকুঠি থেকে আজকের ইকোপার্ক

কর্তৃক রাসেল ইনাম
তানিয়া জামান 478 ভিউ
Print Friendly, PDF & Email

২০০ বছরের অধিক পুরানো ইতিহাস আজ রুপ নিয়েছে ভাটপাড়া ইকোপার্ক নামে। যেখানে এখন মানুষ ছুটে আসে বিনোদনের টানে। ২০১৬ সালে নীলকুঠি কে ইকোপার্ক করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয় খুলনা বিভাগের কমিশনার ও মেহেরপুর জেলা প্রশাসক। ২০১৭ সালের ৭ ই ডিসেম্বর মাননীয় মন্ত্রী  রাশেদ খান মেনন ভাটপাড়া নীলকুঠি কে ইকোপার্ক রুপে শুভ উদ্বোধন করেন। বর্তমানে এটা এখন আধুনিক বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ১৭৭৭ সালে একজন ফারাসি বণিক প্রথম নীল চাষের সূচনা করেন।
১৮০০ শতকে ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের উন্নতির সম্ভাবনায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তাদের ব্যাবসায়ীক প্রয়োজনে বাংলার গ্রামে গ্রামে নীলকুঠি স্থাপন করেছিলেন।
ধারণা করা হয় ১৮২০ সাল থেকে ১৮২৫ সালের মধ্যে তৎকালীন নদীয়া জেলার বর্তমানে মেহেরপুরের গাংনী থানার  কাজলা নদীর তীরে ভাটপাড়ায় নীলকুঠি নির্মিত হয়েছিলো।
এসময় ইংরেজরা সাধারণ কৃষকদের উপর অত্যাচার করে নীল চাষে বাধ্য করতো। তাই বলা যায় বাংলার নীলকুঠি গুলো সাধারণ কৃষক শ্রেণির নির্যাতনের এক একটা উদাহরণ স্বরুপ। একসময়  নীলকুঠি থেকে ভেসে আসতো নর্তকীদের নুপুরের আওয়াজ ও কৃষকদের নির্যাতনের চিৎকার।
তারপর একসময় কোম্পানি গুলোর অবসান হলে এগুলো বিলুপ্ত কালে এর দায়িত্ব আসে মেদিনীপুর জমিদারীর উপর। ১৯৫১ সালে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হলে এই নীলকুঠির দায়িত্ব অর্পিত করা হয় জেলা প্রশাসনের উপর।
২৭ একর জমির উপর স্থাপিত ভাটপাড়া নীলকুঠি। ইংরেজদের হাতে তৈরী এই ভবনটি ৮০ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ৭০ ফুট প্রস্থ যার মুখ রয়েছে উত্তর দিক বরাবর। এই কুঠি বাড়ির ভিতরে রয়েছে প্রসস্থ হল ঘর, বড় খাবার ঘর, নাচ ঘর, প্রর্থনা ঘর সহ মোট ১৩ টি কক্ষ। প্রতিটি দেয়ালে বসানো হয়েছিল বেলজিয়াম আয়না। এবং ঘর গরম রাখার জন্য ছিলো ফায়ার বক্স। এই কুঠির কার্নিশ গুলোতে ছিলো বিভিন্ন রকমের নকশা করা। আর নকশা করা দরজা জানালা গুলো ছিলো সেগুন কাঠের। এর নির্মান কাজে ব্যবহার করা হয়েছিলো চুন, সুরকি এবং ইট, ছাদ তৈরির কাজে লেগেছিল লোহার বীম ও ইটের টালি। দোতালায় ওঠার জন্য ছিলো মজবুত সিঁড়ি।  চারিদিকে ঘেরা এরিয়ার মধ্যে ছিলো বাবুর্চিখানা, জেলখানা, আস্তাবল, হাসপাতাল, স্কুল, পক্ষীশালা, ও মৃৃত্যুকূপ। এর বাইরে হরিণ চরানোর জন্য ছিলো একটি উদ্যান। পর্রবতীতে ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় পাকিস্তানিরা এখানে ক্যাম্প তৈরী করে এবং আশেপাশের এলাকার বুদ্ধিজীবী ও মুক্তিযোদ্ধা দের ধরে এনে হত্যা করতো।
বর্তমানে ধ্বংসস্তুপে পরিনত হওয়া ভাটপাড়া নীলকুঠি এখন বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে ইকোপার্ক নামে পরিচিত যা এখন নতুন রুপে প্রাণ তৈরি করা হচ্ছে। এখানে তৈরী করা হয়েছে বিভিন্ন রকমের পশু পাখিদের মূর্তি, কৃত্রিম লেক যেখানে রয়েছে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, ফুলের বাগান ও সরোবর। বাচ্চাদের বিনোদনের জন্য তৈরি করা হয়েছে শিশুপার্ক, টয় ট্রেন,  নাগরদোলা, উড়ন্ত পালকি, নৌকা ভার্চুয়াল থ্রিডি থিয়েটার, আইসলেন্ড, বসার জাইগা ও কিছু ঘোড়া। এর মধ্যে আকর্ষনীয় হলো গেস্ট হাউস ও স্মৃতিস্তম্ভ। ২০১৭ সালে এখানে তৈরী করা হয় ওষধি বাগান।
ভাটপাড়া নীলকুঠির প্রাণ কেন্দ্র হলো কাজলা নদী, নদীটি এখন মৃতপ্রায়। প্রাচীন কালে এই কাজলা নদী কে কেন্দ্র করেই আশপাশের জনপদ গড়ে উঠেছিলো। বৈশাখে কাজলা নদীতে পানি না থাকলেও বর্ষাকালে নদীটি ঠিকই প্রাণ ফিরে পায়।
জানা যায়, মাথাভাঙা থেকে বেরিয়ে ভাটপাড়া কাজলা হয়ে  নদীটি ভৈরব নদীতে  মিশেছে। এখনো এই নীলকুঠি কালের স্বাক্ষী রুপে দাড়িয়ে আছে ইতিহাস হয়ে। বর্তমানে এটি বাচ্চা ও বড়দের সময় কাটানোর একটি বিনোদন কেন্দ্র।

০ কমেন্ট

রিলেটেড পোস্ট

মতামত দিন