Home » গাংনীর কুখ্যাত দুই সুদ কারবারীর আলিশান বাড়িতে পুলিশের হানা

বিপুল পরিমান ব্লাঙ্ক চেক, স্ট্যাম্প, মামলার নথি ও ৫ টি মোটরসাইকেল জব্দ

গাংনীর কুখ্যাত দুই সুদ কারবারীর আলিশান বাড়িতে পুলিশের হানা

কর্তৃক জুলফিকার আলী কানন
সূর্যেোদয় প্রতিবেদক 264 ভিউ
Print Friendly, PDF & Email

গাংনী উপজেলা শহরের কুখ্যাত ২ সুদ কারবারীর ৬ তলা আলীশান বাড়িতে থানা পুলিশ দেড় ঘন্টা ব্যাপি অভিযান চালিয়েছে।
এসময় সুদ কারবারি শহরের উত্তরপাড়া এলাকার আবু হানিফ (৪২) ও আনারুল ইসলামকে(৫৫) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শনিবার (১১ মার্চ) সন্ধ্যা ৮ টা থেকে রাত আনুমানিক সাড়ে ৯ টা পর্যন্ত গাংনী থানা পুলিশ এই অভিযান চালায়।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাকের নেতৃত্বে তদন্ত অফিসার মনোজিৎ কুমার নন্দী, উপপরিদর্শক (এসআই) মাসুদুর রহমান, এসআই আতিকুর রহমান, এসআই আশিকুজ্জামানসহ পুলিশের বিরাট একটি টিম অংশ নেন অভিযানে।
কুখ্যাত সুদ কারবারি আনারুল ইসলাম গাংনী শহরের উত্তরপাড়া এলাকার মৃত ইউনুস আলীর ছেলে ও আবু হানিফ একই পাড়ার ছমিরুদ্দীনের ছেলে। তবে অভিযান চলাকালিন সময়ে অপর এক সুদ কারবারী পালিয়ে যায়। পুলিশ তাকে আটকের চেষ্টা করছে।

আবু হানিফের ৬ তলা বাড়িতে অভিযান চালানোর সময় ব্যাগ ভর্তি বিভিন্ন ব্যাংকের স্বাক্ষরিত ৩০২ টি ব্লাঙ্ক চেক, ভুক্তভোগীদের স্বাক্ষরিত ৩০০ শ টাকা মুল্যের ৬০০  টি নন জুডিসিয়াল (ব্লাঙ্ক) স্ট্যাম্প, সুদ কারবারের ১৩ টি টালি খাতা, বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে এনআই অ্যাক্ট মামলার ৫টি নথি, ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক কেড়ে নেওয়া বিভিন্ন মডেলের ৬ টি মোটরসাইকেল ও ১টি স্বর্ণের চেইন জব্দ করা হয়েছে।

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, হানিফ ও আনারুল ইসলাম গাংনী উপজেলা শহরের কুখ্যাত সুদ কারবারি। তাদের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে সুদ কারবার ও সুদের টাকা আদায় করার জন্য বিভিন্ন অপর্কম ও অনৈতিকতার অভিযোগ আছে।
ভুক্তভোগীদের উপর নানা ধরণের নির্যাতন, ভয়ভীতি প্রদর্শন, মামলা, হামলা করা ছাড়াও অর্থ আদায়ের জন্য দামী জিনিসপত্র জোর করে তুলে আনাসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে সুদখোরদের বিরুদ্ধে। সুদ কারবারে তারা বর্গিদের সেই ইতিহাসকেও যেনো হার মানিয়েছে।

গাংনী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষকে সাদা স্ট্যাম্প ও ব্লাঙ্ক চেকে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়ে চড়া সুদে টাকা ধার (হাওলাত) দিয়ে আসছিল। তাদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা পরিশোধ করতে না পারলে, সেই চেকে ইচ্ছে মতো টাকার অংক বসিয়ে এবং সাদ স্ট্যাম্পে ইচ্ছেমত লিখে আদালতে মামলা দিয়ে জেল খাটাতো এই অবৈধ সুদের ব্যবসায়ীরা।
সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় ৫টি মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন মালামাল উঠিয়ে নিয়ে এসেছে সুদখোররা। হানিফের বাড়িতে সাদা স্ট্যাম্প ও চেকসহ অন্যের কাছ থেকে জোরপূর্বক উঠিয়ে নিয়ে আসা মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।
আবু হানিফ ও তার সুদ ব্যবসার অপর পার্টনার আনারুল ইসলামকে থানা হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন।

এর আগে গত শুক্রবার রাতে গাংনী বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি সুদখোর আবু হানিফের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।

মনিরুল ইসরাম বলেন, আমি আবু হানিফের কাছ থেকে এক লাখ টাকা সুদের উপর নিয়েছিলাম। সুদআসলে এক লাখ ২০ হাজার টাকা দেওয়ার পরেও আমার ছেলের একটি সুজুকি ব্রান্ডের মোটরাসাইকেল জোরপূর্বক কেড়ে নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছে। আমি তার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করায় শনিবার সকাল থেকে আমাকে নানাভাবে হুমকি ধামকি ও মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছেন আবু হানিফ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আবু হানিফ ও তার ভাই আনিছুর রহমান এবং আনারুল ইসলাম দীর্ঘদিন যাবৎ বাজারে প্রকাশ্যে সুদের কারবার করে আসছেন। তাদের অত্যাচারে নি:স্ব হয়ে অনেকেই আত্মহত্যা করেছেন। অনেকের শেষ সম্বল ভিটেমাটিও লিখে নিয়েছেন তারা। কেউ কেউ তাদের ভয়ে ঘরবাড়ি ও ভিটেমাটি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এবং মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

জানা গেছে, আবু হানিফ এর আগে ওয়েল্ডিং এর দোকান দিয়ে জিবন নির্বাহ করতেন। এছাড়া বড় ভাই আনিছুর রহমান কৃষি পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। বছর দশেক আগে থেকে তারা সুদ কারবারী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করে মেহেরপুর—কুষ্টিয়া সড়কের গাংনী উত্তরপাড়া এলাকায় গড়ে তুলেছেন ৬ তলা বিশিষ্ট আলিশান এক প্রাসাদ। এছাড়াও কুষ্টিয়া শহরে ও রাজধানী ঢাকা শহরেও রয়েছে তাদের কোটি কোটি টাকা দামের একাধিক ফ্লাট। তাদের সুদ ব্যবসার অপর পার্টনার আনারুল ইসলামেরও পল্লী বিদ্যুৎ পাড়া এলাকায় একই মডেলের ৬ তলা বিশিষ্ট আলীশান প্রাসাদ রয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, তাদের কাছ থেকে সুদে টাকা নিয়ে অনেকেই নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন, হয়েছেন সর্বশান্ত । সময়মত সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারায় তারা অকথ্য ভাষায় গালাগালি ও লাঠিয়াল বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে শারীরিকভাবে মারধরেরও অভিযোগ রয়েছে ।

গাংনী থানা পুলিশের অভিযানের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকার শত শত লোকজন তার ৬ তলা প্রাসাদের সামনে এসে হাজির হন। এসময় তারা সুদ কারবারীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানিয়ে শ্লোগান দিতে থাকেন। এলাকাবাসি গাংনী থানা পুলিশের অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে সুদ কারবারী ও সুদ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযান অব্যাহত রাখার ও আইনের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানান পুলিশের কাছে।
এলাকাবাসির অভিযোগ গাংনীতে শুধু আবু হানিফ, আনারুল বা আনিছুর রহমান নয়, উপজেলা শহরের প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি সুদ কারবারির সাথে জড়িত। এছাড়া কয়েকজন ব্যক্তি নামমাত্র সমবায় সমিতির রেজিস্ট্রেশন নিয়ে বেআইনিভাবে প্রতিদিন সুদের টাকা উত্তোলন করছে। সমিতির নামে এসব সুদ কারবারীদের খপ্পরে পড়ে প্রতিনিয়ত শত শত পরিবার নিঃস্ব হচ্ছেন। সমিতির নামে এসব সুদ কারবারীরা সরকারের বিভিন্ন দফতর থেকে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে আইনগতভাবে সুদ কারবার করতে পারে কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আটককৃতদের বিরুদ্ধে অনেকেই মামলা করার জন্য থানায় আসছেন। সুদ ব্যবসায়ীদের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হওয়া ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আটকদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা দায়ের প্রক্রিয়াধীন। আজ রবিবার (১২ মার্চ) তাদের দুজনকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।

০ কমেন্ট

রিলেটেড পোস্ট

মতামত দিন