নিজস্ব প্রতিবেদক
মেহেরপুরের ছোট্ট শহর, সদর উপজেলার নতুনপাড়া। এখানেই জন্ম ও বেড়ে ওঠা শাহী আল সাদাতের। বয়স মাত্র সতেরো। এখনও কলেজ জীবনের প্রথম ধাপ পেরোনোর অপেক্ষায়। কিন্তু বয়সের তুলনায় তাঁর অর্জনের তালিকা অনেক বড়—যা শুনলে অবাক হবেন যে কোনো পাঠক। সর্বশেষ যোগ হলো আরেকটি আন্তর্জাতিক সম্মাননা—“সাউথ এশিয়ান এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৫”। গত শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর ) ঢাকার কেন্দ্রীয় কচি-কাচার মেলা অডিটোরিয়ামে এই সম্মাননা তুলে দেয় সাউথ এশিয়ান সোশ্যাল কালচারাল ফোরাম। মানবাধিকারে অসামান্য অবদানের জন্য তাঁকে এই স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। সাদাত বয়সে তরুণ, কিন্তু চিন্তায় পরিণত। তিনি বিশ্বাস করেন মানবাধিকার মানেই মানুষের প্রতি ন্যায্যতা, সম্মান ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা। স্কুল জীবন থেকেই সামাজিক কাজে যুক্ত তিনি। পুরস্কার গ্রহণের পর এক আবেগঘন মুহূর্তে শাহী আল সাদাত বললেন, “আমি এই সম্মাননা উৎসর্গ করছি আমার বাবা মোহা: শফিকুল ইসলামকে। বাবা-ই আমার অনুপ্রেরণার প্রধান উৎস।” সাদাতের বাবা ও মা দুজনই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। সাধারণ পরিবারে বেড়ে ওঠা এই মেধাবী তরুণের বড় হওয়ার গল্পও সাধারণ নয়। তাঁর মা মোছা: সুরাইয়া আক্তার জানান, ছোটবেলা থেকেই ছেলের ভেতর অন্যের জন্য কিছু করার তীব্র আগ্রহ ছিল। এটি সাদাতের প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মাননা নয়। এর আগে তিনি আরও একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার এবং সাতটি জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেছেন। অল্প বয়সেই এতগুলো সম্মাননা অর্জন তাঁর জীবনে এক বিশেষ মাইলফলক হয়ে থাকবে। বর্তমানে তিনি ঢাকার সেন্ট জোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। কলেজ জীবন শুরু করার মাত্র দুই সপ্তাহের মাথায় আন্তর্জাতিক এ স্বীকৃতি তাঁর ভবিষ্যৎ স্বপ্নকে আরও শক্ত ভিত্তি দিয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফাইজী। সভাপতিত্ব করেন সাউথ এশিয়ান সোশ্যাল কালচারাল ফোরামের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শেখ মো. আমির হামজা। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইবিএআইএস বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য ও ট্রেজারার প্রফেসর মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব ড. মোহাম্মদ জকরিয়া, অর্থ মন্ত্রণালয় সাবেক অতিরিক্ত সচিব পীরজাদা শহীদুল হারুন, এটিএন বাংলা উপদেষ্টা (ইভেন্টস),তাশিক আহমেদ, সেন্টার ফর গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নির্বাহী পরিচালক ড. মো. আব্দুল ওয়াহাব, রোহিঙ্গা রিপ্যাট্রিয়েশন স্ট্রাগল কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল, এম. গফুর উদ্দিন চৌধুরী রাষ্ট্রিকা সাহিত্য প্রতিষ্ঠান নেপালের প্রেসিডেন্ট ঋশভ দেব গিমরে, কলকাতা কাজী নজরুল গবেষক ড. দীপা দাস।সন্ধ্যার আলো-ঝলমলে পরিবেশে মঞ্চে যখন সাদাতকে সম্মাননা প্রদান করা হয়, উপস্থিত দর্শকরাও দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে তাঁর এই অর্জনকে অভিনন্দিত করেন। স্থানীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে সাদাত এখন গর্বের প্রতীক। বন্ধুরা তাঁকে শুধু সহপাঠী নয়, একজন অনুপ্রেরণাদায়ী চরিত্র হিসেবে দেখে। অনেকেই বিশ্বাস করেন, মেহেরপুরের ইতিহাসে তাঁর নাম যুক্ত হবে এক উজ্জ্বল অধ্যায়ে।