মুহম্মদ মহসীন
“দাও গো ব্যথার মালা গেঁথে, প্রেমের উপহার, হোক সে কাঁটা পথের দিশা, তোমায় ভুলি বার”—এমনই আবেগঘন কথামালা দিয়ে পাঠক-শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে চলেছেন কবি ও গীতিকার ম. গোলাম মোস্তফা। অর্ধশতকেরও বেশি সময় ধরে তাঁর হাতে বোনা শব্দ হয়ে উঠেছে কবিতা, গান, গল্প আর ছড়ার সমাহার। জীবনের সুখ-দুঃখ, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, ভালোবাসা ও ব্যথাকে সঙ্গী করে তিনি লিখেছেন দুই হাজার পাঁচশ’রও বেশি সৃষ্টি। তাঁর লেখা গান ছুঁয়েছে বাংলাদেশ বেতারের তরঙ্গ, মিশেছে মানুষের হৃদয়ের তারে। ২০১৮ সালে প্রকাশিত হয় প্রথম কাব্যগ্রন্থ “চাঁদ জেগে রয় একা”। সেই পথ ধরে আসছে দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ “বুনো ফুলে ওঠে দুলে”—যেখানে তিনি আরও গভীর আবেগের রঙে রাঙিয়েছেন জীবনের ক্যানভাস। শুধু বাংলাদেশেই নয়, পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যপত্রিকাতেও নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে তাঁর লেখা। কবি জানান, “স্কুল জীবন থেকেই লেখালেখির প্রতি ভালোবাসা জন্মায়। কারো প্রেরণা পাইনি, কিন্তু বই পড়ে সাহস পেয়েছি। শব্দই হয়ে উঠেছে আমার সঙ্গী।” মেহেরপুর ভৈরব সাহিত্য সাংস্কৃতিক চত্বরে দীর্ঘদিন ধরে দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। একইসঙ্গে সম্পাদনা পরিষদের সদস্য হিসেবেও জড়িত আছেন সাহিত্যচর্চায়। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের বহু কবি-সাহিত্যিককে তিনি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন—ওস্তাদ রফিকুর রশীদ, ফজলুল হক সিদ্দিকী, মুহাম্মদ রবীউল আলম, বাশরী মোহন দাস, আব্দুল মজিদ, প্রয়াত ডা. রজব আলী, প্রয়াত এম রফিক হাসানসহ আরও অনেকে। তাঁদের অবদানকে তিনি দেখেন নিজের সাহিত্যভুবনের প্রেরণা হিসেবে। তবে সাফল্যের পথ কেবল আলোয় ভরা ছিল না। ২০২০ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তাঁর প্রিয় সহধর্মিণী। জীবনের এই বড় দুঃখ বুকে নিয়েই আজও তিনি কলম চালিয়ে যাচ্ছেন। এক ছেলে ও দুই মেয়ের পিতা হিসেবে পরিবারে তিনি এখনও ভরসার কেন্দ্রবিন্দু। ১৯৫২ সালের ৫ এপ্রিল মায়ের পৈতৃক ভিটা মেহেরপুরের গোভিপুর গ্রামে জন্ম ম. গোলাম মোস্তফার। শৈশবের স্বপ্ন থেকে শুরু করে আজকের দীর্ঘ সাহিত্যযাত্রা—সবকিছুই যেন এক নদীর স্রোতের মতো বয়ে চলেছে। ব্যথা, প্রেম আর ভালোবাসার রঙে ভর করে তাঁর শব্দরা আজো পাঠক-শ্রোতার হৃদয়ে নতুন করে জীবন জাগায়।
পূর্ববর্তী পোস্ট