Home » বিচার ক্ষেত্রে রেকর্ড গড়লো মেহেরপুর চীফ জুডিশিয়াল আদালত ৮ মাসে ৪৪৫ মামলা নিষ্পত্তি

সাক্ষী গ্রহণে ‘জিরো টলারেন্স

বিচার ক্ষেত্রে রেকর্ড গড়লো মেহেরপুর চীফ জুডিশিয়াল আদালত ৮ মাসে ৪৪৫ মামলা নিষ্পত্তি

কর্তৃক Mahabobul Haque Polen
নিজস্ব প্রতিবেদক 25 ভিউ
Print Friendly, PDF & Email

মেহেরপুর জজ আদালত ভবনের সিঁড়ি বেয়ে দ্বিতীয় তলায় উঠতেই বিচারপ্রার্থী মানুষদের ভীড়। বিভিন্ন মামলার বাদী, সাক্ষী আসামীদের উপস্থিতিতে সরগরম আদালত অঙ্গন। সবার প্রত্যাশা এতদিন মামলার বিচার প্রক্রিয়া ঝুলে ছিলো। এবার মামলা দ্রুত শেষ হচ্ছে। আগে সাক্ষী হতো না। ঘুরে যেতো। এখন শত শত সাক্ষী আসছে এবং সাক্ষী জেরার মুখোমুখি হয়ে সবাই বাড়ি ফিরছে। বিচারে কারাদণ্ড অথবা খালাস হলেও নেই কোন অস্বস্তি। পঞ্চাশোর্ধ্ব আমিনা হালসানা হাসিমুখে বললেন, “১০ বচুর আগির কেচ, কতবার সাক্ষী এনিচি, ঘোরৎ দিইচে। ইবার ৩ সাক্ষী এনিচি, ঘোরৎ দেয়নি। ইবার সাক্ষী নিইলে কেচ শেষ হবি।” আদালতের ভেতরে উঁকি দিতেই দেখা গেল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বসে আছেন। করিডরে সারিবদ্ধ সাক্ষীরা অপেক্ষমাণ। পুলিশ সদস্য জানালেন বিভিন্ন জেলার সরকারি সাক্ষীরা এসেছেন আজ সাক্ষ্য দিতে। াইনজীবীরা দৌড়ঝাঁপ করছেন এক আদালত থেকে আরেকটিতে। তবে সবার গন্তব্য প্রায় একই চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহজাহান আলীর আদালত। আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন বললেন, “চিফ স্যার সাক্ষীর প্রশ্নে জিরো টলারেন্স। যত সাক্ষী আসুক, যত রাত হোক—সব জেরা শেষ না করে আদালত ওঠেন না।” তার এই নীতি ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির ফলেই মাত্র ৮ মাসে ৪৪৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে, যা জেলার জন্য রেকর্ড। এই সময়ে আদালতে ৯৩৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। শাহজাহান আলী যোগ দেন ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ তারিখে। তাঁর আদালতে তখন বিচারাধীন মামলা ছিল ১১২২টি। নতুন যুক্ত হয় ২৮৩টি মামলা। ৮ মাসে নিষ্পত্তি করেছেন ৪৪৫টি মামলা। নিষ্পত্তির হার ১৫৭%, যা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসির জন্মলগ্ন থেকে সর্বোচ্চ। সমগ্র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিতে (জেলা আদালত মিলিয়ে) তাঁর সময়কালে নিষ্পত্তি হয়েছে ১০০১টি মামলা। এতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬৩৭টিতে।এতে সাধারণ মানুষের মুখে স্বস্তি এসেছে বলে বিচার প্রার্থীরা মনে করছেন। সাক্ষী দিতে আসা একজন শিক্ষক বললেন, “৫ বছর পর সাক্ষ্য দিতে পেরে আমি স্বস্তি পেয়েছি। এভাবে সাক্ষ্য গ্রহণ হলে মামলার জট অনেকটাই কমবে, বিচারও মিলবে দ্রুত।” মেহেরপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি সাইদুর রাজ্জাক বলেন, ফ্যাসিস্ট আমলে সাক্ষী আসলেও আদালত নেয়নি। এখন সবাই—সরকারি কৌঁসুলি থেকে পেশকার—দ্রুত সমন পাঠাচ্ছে। বর্তমানের দ্রুত ও স্বচ্ছ বিচারপ্রক্রিয়ার আশা ও ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রতিফলনও ফুটে উঠেছে। আদালতের সঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয় এবং বিচারকের আন্তরিকতার মিলেই এখন দ্রুততর ও কার্যকর বিচার সম্ভব হচ্ছে। বিচারকের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা ছাড়া এটা সম্ভব হতো না।” জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মারুফ আহমেদ বিজন জানান,
“আমাদের উপর চাপ বাড়লেও, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির স্বার্থে আমরা সবসময় প্রস্তুত। এতদূর এগোনোর পেছনে আইনজীবীদের উদ্যমও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি সত্যিই নজিরবিহীন সাফল্য।” এছাড়া জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক আসাদুল আযম খোকন যোগ করেন, “আগে ন্যায্য বিচার পাওয়া ছিল আলাদীনের চেরাগের মতো দুরূহ। এখন মানুষ দ্রুত ন্যায্য বিচার পাচ্ছে, এবং এর ফলে আদালতের প্রতি আস্থা অনেক বেড়েছে।” মেহেরপুরের মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের এই রেকর্ড শুধু সংখ্যার নয়, আস্থারও প্রতীক। দ্রুত সাক্ষ্যগ্রহণ আর মামলার নিষ্পত্তি মানুষকে ফিরিয়ে দিচ্ছে ন্যায়বিচারের ভরসা।

০ কমেন্ট

রিলেটেড পোস্ট

মতামত দিন


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.