বন্যার পানিতে বাড়ির আশপাশের এলাকা তলিয়ে যাওয়াতে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের সোনাতলা চর থেকে শতাধিক গরু নিয়ে ১৬ দিন ধরে মেহেরপুরে অবস্থান করছেন ৪ জন গরুর মালিক।
সোমবার (৭ অক্টোবর), গাংনী উপজেলার মাইলমারী গ্রামের টেংরামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের মাঠে দেখা মেলে শতাধিক গরুসহ শফিকুল ইসলাম ও লিটন হোসেন নামের দু’জন মালিকের।
তিনারা জানান, রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের সোনাতলা চর এলাকা বন্যাকবলিত হওয়াতে উপায় না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের ফেলে শতাধিক গরুর জান বাঁচাতে তিনারা মেহেরপুর এলাকায় গত ১৬ দিন ধরে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। গরুর দুধ বিক্রি করেই ক্রয় করছেন চাল-ডালসহ নিত্য প্রতিয়োজনীয় পণ্য। যখন যে এলাকায় অবস্থান করেন, সেখানেই যে কারো বাড়িতে রান্নার কাজ চালিয়ে নেন। দু’জনে গরু চরানোতে ব্যস্ত সময় পার করেন আর বাকী দু’জনে ঘুমের ঘাটতি পূরণ আর রান্নার কাজ চালিয়ে নেন। এভাবে আজ এরা কাল ওরা করেই চলছে জীবন-যাপন।
সোনাতলার চর ডুবে যাওয়াতে ৪ জনের শতাধিক গরু নিয়ে তিনারা মেহেরপুর সদর উপজেলার কালিগাংনী ও গাংনী উপজেলার কাজীপুর, করমদী, তেঁতুলবাড়ীয়া, লক্ষ্মীনারায়নপুর, হিন্দা ও মাইলমারীসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে অতিবাহিত করেছেন গত ১৬ টি দিন। কখনও মাঠে, কখনও মাচায়, কখনও বা বিদ্যালয়ের বারান্দার কোনে রাত কাটিয়েছেন তিনারা। সন্ধা ঘনিয়ে আসলেই শতাধিক গরু নিয়ে পড়তে হয়েছে বিপদে। কারণ এতোগুলা গরুর খোঁয়াড় কিংবা গোহাল ঘর না থাকায় মাঠের নির্দিষ্ট একটি খোলা যায়গাতে সকল গরুর পা বেঁধে আটকে রাখা হয়। সারারাত মশার প্রকোপে কামড় সহ্য করে ভোর হলেই আবার বেরিয়ে পড়তে হয় গরু নিয়ে চরানোর উদ্দেশ্যে। ফাঁকা মাঠ ও বাগানসহ গ্রামীন কাঁচা সড়কগুলোতেই এসব গরু চরাতে হয়। মেহেরপুরের অন্য গ্রাম অপেক্ষা মাইলমারী এলাকায় ঘাসের পরিমাণ বেশি হওয়াতে এখানেই রয়েছেন কয়েকটি দিন। নিজ এলাকায় বন্যার পানি নেমে গেলেই ফিরবেন এসব গরু নিয়ে।
রাতে গরু নিয়ে চোর-ডাকাত কিংবা সন্ত্রাসীদের কোন ঝামেলা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনারা নিরাপদে রয়েছেন বলে জানান। তবে পরিবার-পরিজন কি অবস্থায় রয়েছেন তা নিয়ে টেনশনে রয়েছেন কারণ বসতবাড়ি বাদে পুরো চর এলাকা পানির নিচে। কি খাচ্ছে কিভাবে রয়েছে এ নিয়েই যতোসব চিন্তা।