ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ঝিনাইদহে ব্যবসায়ী তোয়াজ উদ্দীন (৫৩) হত্যা মামলার ২১ দিন পর রহস্য উদ্ঘাটন করেছে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার অভিযোগে আটক করা হয়েছে তানভীর হাসান (১৮) নামের এক মাদরাসা ছাত্রকে। সে যশোর কোতোয়ালি থানার কামারগন্যা গ্রামের আবুল কালাম আজাদের ছেলে। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ। এরআগে সোমবার দুপুরে খুলনার বটিয়াঘাটা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানায়, ২০২২ সাল থেকে তোয়াজ উদ্দীনের সঙ্গে তানভীরের পরিচয় গড়ে ওঠে। স্ত্রী না থাকায় তোয়াজের সঙ্গে তানভীরের সমকামিতার সম্পর্ক তৈরি হয়। সে সূত্রে তানভীর ঢাকায় তোয়াজের বাসা এবং গ্রামের বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াত করতো। গত ১ সেপ্টেম্বর তানভীরকে নিয়ে তোয়াজ ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কেশবপুর গ্রামে যান। ওই রাতে ঘুমানোর আগে তোয়াজ জোরপূর্বক তানভীরকে বলাৎকার করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে তানভীর। গভীর রাতে ঘরের ভেতরে থাকা একটি পাথরের শীল দিয়ে ঘুমন্ত তোয়াজের মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করে তাকে হত্যা করে সে। খুনের তিন দিন পর, ৩ সেপ্টেম্বর, তোয়াজের ঘর থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকলে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়।
পুলিশ আরও জানায়, গ্রেপ্তারের পর তানভীর জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে। সে জানায়, খুনের পর তোয়াজের পা বেঁধে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি নিয়ে ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে দেয় এবং চাবিটি পাশের একটি পুকুরে ফেলে দেয়। যাওয়ার সময় ঘরের দেয়ালে একটি চিরকুট লিখে রেখে যায়। সেখানে লেখা ছিল- ‘তাকে মারার কারণ সে মুহাম্মাদ (সঃ) কে গালি দিসে, তাঁর নামে খারাপ কথা বলেছে। আল্লাহু আকবার।’ এদিকে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের পর এলাকার মানুষের মাঝে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
কেশবপুর গ্রামের চেয়ারম্যান খুরশিদ মিয়া বলেন, ‘তোয়াজ যখন গ্রামে আসতেন, তখন তার বাসায় মাদরাসার ছাত্ররা যাতায়াত করতো। আমরা ধারণা করতাম, তিনি ওদের আর্থিক সহায়তা করেন। কিন্তু তিনি সমকামী ছিলেন, এটা কেউ জানতো না। তানভীর গ্রেপ্তার হওয়ার পর হত্যার পেছনের আসল কারণ জানা গেলো।’
এ ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান জাকারিয়া বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডটি প্রথমে মোটিভ ও ক্লুলেস ছিল। নিহত তোয়াজ উদ্দীনের ভাই আক্কাস আলী বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর ডিবি পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল সার্বক্ষণিক মনিটরিং করে হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে শনাক্ত এবং গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। গ্রেপ্তার আসামিকে আদালতে প্রেরণ করা হবে।