কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ে জনবল নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন(দুদক) ও স্বাস্থ্য বিভাগ। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সোমবার(২৭ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার পাঁচ সদস্যের টিম সিভিল সার্জন অফিসে যায়। পরে বেলা বারোটার দিকে স্বাস্থ্য বিভাগের একটি উচ্চপর্যায়ের টিম অভিযোগ তদন্তে ওই কার্যালয়ে উপস্থিত হয়। এ সময় উভয় টিমের সদস্যরা সিভিল সার্জন ডা. শেখ মোঃ কামাল হোসেন, কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা(আরএমও) হোসেন ইমামসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেন। এ সময় দুদক টিমের সদস্যরা নিয়োগ পরীক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মোবাইল ফোন জব্দ করেন। স্বাস্থ্য বিভাগের টিমে নেতৃত্ব দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক(প্রশাসন) অধ্যাপক ডা: খায়ের আহমেদ চৌধুরী। এছাড়া দুদকের টিমের নেতৃত্বে ছিলেন সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক মইনুল আহসান রওশনী। এদিকে তদন্ত কমিটির কাছে নিজের অবস্থান জানানোর পর আরএমও হোসেন ইমাম সিভিল সার্জন কার্যালয় ত্যাগ করার চেষ্টা করলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা তার উপর চড়াও হয়। এ সময় তাকে তাকে লক্ষ্য করে ডিম ছুঁড়ে মারতে দেখা যায়। হামলার মুখে হোসেন ইমাম পুনরায় সিভিল সার্জন অফিসে গিয়ে আশ্রয় নেন। বিকেল ৪টা পর্যন্ত তিনি সিভিল সার্জন অফিসের ভেতরেই অবরুদ্ধ ছিলেন। জানা গেছে,গত শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সাতটি ক্যাটাগরিতে ১১৫টি শূন্য পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন ১৬ হাজার ৭৮৯ জন চাকরিপ্রার্থী। কিন্তু পরীক্ষার দিন ভোরে কুষ্টিয়া শহরের একটি বাড়ি থেকে ২৫-৩০ শিক্ষার্থীর রহস্যজনক প্রবেশ ও পরীক্ষার আগমুহূর্তে বের হওয়ার দৃশ্যে বিতর্কের সৃষ্টি করে। বাড়িটি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা.হোসেন ইমামের। পরে ছোট ছোট ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগােযাগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় নিয়োগ কার্যক্রম সম্পর্কে জনমনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়।’ এর জের ধরে শনিবার দুপুরে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস, ঘুষ বাণিজ্য ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন একদল বিক্ষুব্ধ যুবক। তালা ঝুলিয়ে বৈষম্যবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন বিক্ষুব্ধরা। এই অবস্থায় নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার দিন একটি বাসা থেকে ২৫-৩০ জন পরীক্ষার্থীর বের হওয়ার ভিডিও ভাইরাল হওয়া প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি লেখেন কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. শেখ মোহাম্মদ কামাল হোসেন। এরই প্রেক্ষিতে নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল সাময়িক স্থগিত করা হয়। পরেরদিন রবিবার সকাল থেকেও নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলসহ পুনরায় পরীক্ষা গ্রহণের দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন ছাত্র-জনতা। পরে সিভিল সার্জনের আশ্বাসে তারা কর্মসূচী স্থগিত করেন। তদন্ত শেষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন,তার নেতৃত্বে ৩ সদস্যের কমিটি হয়েছে। তিন কার্য দিবসের মধ্যে তারা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন। তিনি বলেন, ঘটনার ব্যাপারে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও বিশ্লেষণ করছেন তারা। পাশাপাশি আরএমও হোসেন ইমামের সংশ্লিষ্টতাসহ সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে বিস্তারিত কিছু জানাতে না পারলেও কিছু একটা যে ঘটেছে, সে গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। দুদকের উপপরিচালক মইনুল আহসান রওশানি বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দুজনের মোবাইল ফোন জব্দ করেছেন। এছাড়া বিভিন্ন নথিপত্র যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তবে আরএমও হোসেন ইমাম ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতার কথা গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে অস্বীকার করেন।
পূর্ববর্তী পোস্ট

