ছাত্রী সপ্না খাতুনকে ধর্ষনের অভিযোগে দায়ের হওয়া মামলায় ২২ দিনেও গ্রেপ্তার হয়নি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার হাড়াভাঙ্গা এইচ বি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আলোচিত প্রধান শিক্ষক রাজু আহমেদ। এনিয়ে ভুক্তভুগী ও তার পরিবার এবং শিক্ষক শিক্ষার্থী সহ সচেতন মহলের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। দশম শ্রেনীর ছাত্রী সপ্না খাতুনের সাথে অশ্লীল ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর থেকে পলাতক রয়েছে প্রধান শিক্ষক রাজু আহমেদ। দ্রত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসি। এদিকে ছেলের বান্ধবীর সাথে অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়িয়ে নানা আলোচনা সমালোচনার মুখে পড়েছে রাজু মাষ্টার। এই অনৈতিক কর্মকান্ডের ঘটনায় সাময়িক বহিস্কার করে বিদ্যালয় পরিচালণা পর্ষদ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই আতোয়ার জানান, সাময়িক বহিস্কৃত প্রধান শিক্ষক রাজু আহমেদের বিরুদ্ধে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী ২০০৩) এর ৭/৯(১)/১০ ধারায় সপ্না খাতুন গত ২৪ নভেম্বর সোমবার মেহেরপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলার আবেদন করেন বিচারক আলী মাসুদ শেখ আবেদনটি আমলে নিয়ে মামলা নথিভুক্ত করতে গাংনী থানাকে নির্দেশ দিলে গত ২৮ নভেম্বর মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়। মামলা নং ৩৪। মামলার আসামী পলাতক রয়েছে তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, কাজিপুর গ্রামের মৃত আফাজুদ্দিনের ছেলে প্রধান শিক্ষক মোঃ রাজু আহমেদ ২০২২ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিন তার অফিসে একা ডেকে নিয়ে নানা রকম প্রলোভনে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে হাত দেয়। বাধা দিতে গেলে মুখ চেপে ধরে খুন করে ফেলার হুমকি দিয়ে জোর পূর্বক ধর্ষন করে। এভাবে ১০/১১/২০২৫ সাল পর্যন্ত দিনের পর দিন তাকে স্কুলের অফিস রুম সহ বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে ধর্ষন করতে থাকে।
এছাড়া রাজু মাষ্টার তার মোবাইল ফোন থেকে তাকে ফোন করেন এবং যৌনাঙ্গ প্রদর্শন সহ বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে যৌন হয়রানী করতে থাকে দিনের পর দিন। এই ভাবে রাজু আহমেদ বিয়ের প্রলোভনে কুষ্টিয়া শহরে তার এক আত্মীয়ের বাড়ীতে নিয়ে স্ত্রীর পরিচয় দিয়ে দিনের পর দিন ধর্ষন করত। শেষ ঘটনার তারিখ ও সময়ে বিয়ের কথা বলে তার অফিসে স্কুল ছুটির পরে ডেকে নিয়ে দরজা জানালা বন্ধ করে দিয়ে একাধিক বার জোর পূর্বক ধর্ষন করে।
সপ্না খাতুনের আইনজীবি শাহরিয়ার মাহমুদ শাওন বলেন, আসামী গ্রেফতার না হওয়া দু:খ জনক। ন্যায় বিচারের স্বার্থে আসামীকে দ্রত গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা প্রয়োজন ।
এদিকে গত ২০ নভেম্বর বুধবার প্রধান শিক্ষক রাজু আহমেদের স্থায়ী বহিষ্কার ও আলোচিত ভিডিও কান্ডের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসী।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, হাড়াভাঙ্গা এইচবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাজু আহমেদ ও দশম শ্রেনির এক ছাত্রীর অনৈতিক ও অশোভন আচরণের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, যা শুধু বিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুন্ন করেনি, বরং সকল শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় জনগনের মধ্যে চরম উদ্বেগ ও অসন্তোষের সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে আতঙ্কিত ও বিব্রতবোধ করছে। তাই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত না হলে এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে শিক্ষা ব্যবস্থা হুমকির সম্মুখিন হবে। এ কারনে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক অবিলম্বে স্থায়ী বহিষ্কার করার জন্য অনুরোধ করে শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসী।
এদিকে সপ্নার আত্মীয়-স্বজনরা জানিয়েছেন, লম্পট বহিস্কৃত প্রধান শিক্ষক রাজু ও তার সহযোগীদের চাপের মুখে রয়েছেন। এছাড়া নানাভাবে ভয়-ভীতি ও হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
অপরদিকে আলোচিত ভিডিও কান্ড ও ধর্ষনের ঘটনা ধাপমাচাপ দিতে বহিস্কৃত প্রধান শিক্ষক রাজু সপ্নার পরিবারকে ম্যানেজ করতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। অর্থবিত্ত আর ক্ষমতার দাপটের কাছে সপ্নার পরিবার অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে তার স্বজনরা।
এবিষয়ে কথা বলতে এইচবি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাময়িক বরখাস্ত ভাইরাল হওয়া প্রধান রাজু মাষ্টারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল দেয়া হলে বন্ধ পাওয়া যায়।
গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো: মনিরুল ইসলাম বলেন,ঘটনাটি নিয়ে মামলা হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে শিক্ষক ছাত্রীর অনৈতিক কর্মকান্ড দু:খ জনক। এধরনের ঘটনা আর না ঘটে এজন্য সতর্ক থাকার আহবান জানান তিনি।
পূর্ববর্তী পোস্ট

