Home » শিক্ষক–শিক্ষার্থী অনুপস্থিত দিনের পর দিন, তবুও নিয়মিত বেতন–ভাতা উত্তোলন

শিক্ষক–শিক্ষার্থী অনুপস্থিত দিনের পর দিন, তবুও নিয়মিত বেতন–ভাতা উত্তোলন

কর্তৃক Mahabobul Haque Polen
নিজস্ব প্রতিবেদক 25 ভিউ
Print Friendly, PDF & Email

দিনের পর দিন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী অনুপস্থিত, পাওয়া যায়নি শিক্ষার্থী হাজিরা খাতা, ক্লাসরুমে ঝুলছে তালা—এমন চিত্র দেখা গেছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ধানখোলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটে। নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম না থাকলেও মাসের শেষে সরকারি তহবিল থেকে ঠিকই বেতন–ভাতা তুলছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। এমপিওভুক্ত এই প্রতিষ্ঠানের এমন বেহাল চিত্র নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ ও প্রশ্ন বাড়ছে।

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির পুরো এলাকা জুড়ে চরম নীরবতা। একাধিক ক্লাসরুমে তালা ঝুলছে, কোথাও কোনো শিক্ষার্থীর উপস্থিতি নেই। অফিস কক্ষে পাওয়া যায় মাত্র চারজন শিক্ষক-কর্মচারী। অথচ প্রতিষ্ঠানের অনুমোদিত জনবল ৯ জন। উপস্থিতদের মধ্যে ছিলেন অধ্যক্ষ, একজন প্রভাষক ও দুজন কর্মচারী।

সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো—শিক্ষার্থীদের হাজিরা খাতা দেখাতে পারেননি কেউই। অধ্যক্ষের কক্ষে, প্রশাসনিক কক্ষে এবং শিক্ষক কক্ষে কোথাও কোনো উপস্থিতি রেজিস্টার পাওয়া যায়নি। এতে প্রকৃতপক্ষে শিক্ষার্থী রয়েছে কিনা, তারা নিয়মিত আসে কিনা—তা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, ধানখোলা টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউট ২০২২ সালে এমপিওভুক্ত হয়। এমপিওভুক্ত হওয়ার পর থেকেই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা নিয়মিত সরকারি তহবিল থেকে প্রদান করা হচ্ছে। তবে বাস্তবে শিক্ষা কার্যক্রম প্রায় বন্ধ থাকায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।

কলেজ কর্তৃপক্ষ মৌখিকভাবে দাবি করে, ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে ৩২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। তবে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া ২২ জন শিক্ষার্থীর কোনো লিখিত নথি, ভর্তি রেজিস্টার বা প্রমাণপত্র দেখাতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। ফলে দুই শিক্ষাবর্ষের ভর্তি তথ্য নিয়েই চরম অসঙ্গতি ও সন্দেহ তৈরি হয়েছে।

ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি কোনো কর্মকর্তা বা শিক্ষক। বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও সংশ্লিষ্টরা কোনো দৃশ্যমান তথ্য-প্রমাণ দেখাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তবে মাঝে মাঝে কয়েকজন শিক্ষার্থী আসলেও কখনো হাজিরা খাতায় তাদের নাম প্রেজেন্ট করা হয় না। আবার কিছু কিছু শিক্ষক আসে যারা সপ্তায় একদিন এসে হাজিরা খাতায় পূর্ণাঙ্গ স্বাক্ষর করে যান।

প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মাহফিজুর রহমান শিলন বলেন, কিছু শিক্ষার্থী আছে, তবে নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না। নানা কারণে সমস্যা হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীদের হাজিরা ও ভর্তি সংক্রান্ত কোনো লিখিত প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেননি।

ধানখোলা গ্রামের ছমির উদ্দিন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কলেজটিতে শিক্ষক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত রয়েছে। কলেজটি দেখে মনে হয় একটি পরিত্যক্ত ভবন। নিয়মিত শিক্ষকরা যদি কলেজে না আসেন তাহলে শিক্ষার্থীর দিন দিন কলেজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এটাই স্বাভাবিক।

রবিউল ইসলাম নামের এক পথচারী বলেন, সকালে প্রায় প্রতিদিনই এই রাস্তা দিয়ে আমাকে গাংনী যেতে হয়। কলেজটি কি কখনো খোলা দেখি নি। মাঝেমধ্যে কয়েকজন শিক্ষককে দেখা যায় পতাকা উত্তোলন করে বসে থাকতে। তবে শিক্ষার্থীর দেখা পাইনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ধানখোলা গ্রামের একজন জানান, কলেজটিতে বিভিন্ন সময় অনৈতিক কার্যক্রম চলে। কেবলমাত্র শিক্ষকদের গাফেলতির কারণে কলেজটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়েছে। প্রতি মাসে সরকার যেহেতু বেতন দিচ্ছে শিক্ষকদের উচিত নিয়মিত ক্লাস পরীক্ষা নেওয়া। তারা কোন ক্লাস পরীক্ষা না নিয়েই বসে বসে সরকারি টাকা উত্তোলন করছে। ফলে সরকারি টাকা কোন কাজেই আসছে না।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ও গাংনী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, কলেজটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা নেই বললেই চলে এর সত্যতা পেয়েছি। আগামী জানুয়ারিতে ভর্তির কার্যক্রম শুরু হবে। আশা করি শিক্ষার পরিবেশ আবার নতুন করে ফিরবে। এরপরেও যদি শিক্ষকদের গাফেল হতে থাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অন্যদিকে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, ইতিমধ্যে বিষয়টি কানে এসেছে। শিক্ষা অফিসারকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। সত্যতা পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।



রিলেটেড পোস্ট

মতামত দিন


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.