মেহেরপুরে শোভাযাত্রা ও পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে সম্পন্ন হয়েছে শারদীয় দুর্গাপূজার বিসর্জন উৎসব। বিজয়া দশমীর বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে পাঁচদিনের শারদীয় দুর্গোৎসবের।
সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন পূজামণ্ডপে চলে বিহিত পূজা, দর্পণ বিসর্জন ও নানা আচার অনুষ্ঠান। দুপুর গড়িয়ে বিকালে প্রতিমা নিয়ে শুরু হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। শহর ও গ্রামের পূজামণ্ডপ থেকে একে একে প্রতিমা নিয়ে যাত্রা করেন ভক্তরা। পরে ৩৯টি প্রতিমা আনুষ্ঠানিকভাবে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় মেহেরপুরের দুর্গোৎসব।
হিন্দুধর্মের অনুসারীরা জানান, এবার বিজয়া দশমীর দিনে দেবী দুর্গা কৈলাসে ফিরে যান হাতিতে চরে । সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস এই দিনে কেবল প্রতিমা নয়, বরং মানুষের অন্তরে থাকা অসুরিক প্রবৃত্তি যেমন কাম, ক্রোধ, হিংসা, লোভ, লালসার প্রতীকী বিসর্জনই মূল তাৎপর্য। ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য আর শান্তি প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার।
দেবী বিদায়ের আগে মণ্ডপে মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী সিঁদুর খেলা। লাল রঙে রাঙিয়ে তোলা নারীদের উপস্থিতিতে মুখরিত হয়ে ওঠে পূজামণ্ডপগুলো। স্বামীর মঙ্গল কামনায় নারীরা দেবীর সিঁথির সিঁদুর নিজেদের সিঁথিতে তুলে নেন। দেবীর চরণের সিঁদুর মেখে একে অপরকে আলিঙ্গনে রাঙিয়ে দেন। এই আচার শেষে দেবীর প্রতি শেষবারের মতো প্রার্থনা করেন ভক্তরা।
দিনভর নানা আয়োজনের পর যখন বিসর্জনের পালা আসে, তখন চোখে জল আর কণ্ঠে জয়ধ্বনি মিলেমিশে এক আবেগঘন পরিবেশ তৈরি হয়। আসছে বছর আবার হবে, ভক্তদের এই স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে মেহেরপুরের বিসর্জন মঞ্চ।
বিজয়া দশমী উপলক্ষে জেলার বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় উদ্যোগে নানা সাংস্কৃতিক আয়োজনও ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে মূল উৎসব ছিল প্রতিমা বিসর্জন কেন্দ্রিক। উৎসব শেষে আনন্দ-উল্লাসের মাঝেই ভক্তদের চোখেমুখে ছিল বিদায়ের বেদনা আর আগামী বছরের অপেক্ষা।
গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)বাণী ইসরাইল জানান, মাননীয় পুলিশ সুপার স্যারের নির্দেশে আমরা সার্বিক নিরাপত্তা গ্রহণ করেছি। শান্তিপূর্ণভাবেই পূজার সকল কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।
গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার হোসেন জানান, প্রতিটি পূজা মন্ডপ সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে এবং সুষ্ঠু ও কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে কোন রকমের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই এবারের পূজা বিসর্জন কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।