চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার হিসেবে সদ্য আদেশ পাওয়া গৌতম কুমার বিশ্বাসকে পদায়নের আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে চুয়াডাঙ্গায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ নেতার অংশগ্রহণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। আর এই কর্মসূচিতে অন্যতম নেতৃত্ব দিয়েছেন এই ছাত্রলীগ নেতা। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রীতিমতো সমালোচনা ঝড় উঠেছে। বিভিন্নজন ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নেতিবাচক সমালোচনা করছেন।
বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হয়। কেউ-ই নাম বললেন না। তারা বলেন, নতুন একজন পুলিশ সুপারকে পদায়ন করা হয়েছে। আগে তিনি আসুক তারপর তার কার্যক্রম দেখে বোঝা যাবে। না জেনেই তার পদায়ন বাতিলের দাবি। এরমধ্যে কোনো ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। এছাড়া ছাত্রলীগ নেতা ও সাবেক ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতাও এতে অংশগ্রহণ করেছে। যেটা নানা প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে।
এছাড়া জেলা ছাত্রদলের এক নেতা নাম প্রকাশ ও বক্তব্য দিতেও রাজী হননি। তবে তিনি তার মন্তব্যে বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী পুলিশ সুপার আসবেন বা যাবেন। এভাবে ছাত্রলীগ নেতা আর ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে মানববন্ধন করাটা কতটা যুক্তিযুক্ত? এটা ঠিক না।
গত রোববার ১৪ সেপ্টম্বর সকালে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে ‘চুয়াডাঙ্গাবাসী ব্যানারে’ এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালনকালে দেখা যায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুমন রেজা মানববন্ধনের ব্যানারে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন, আবার মানববন্ধন আগতদের লাইনে যেয়ে তাদের লাইনও সোজা করাসহ বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। আবার মাঝেমধ্যে মোবাইল ফোনে কথা বলছেন।
বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত চুয়াডাঙ্গা সদর থানা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিগত ২০১০ সালে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা ছাত্রলীগের ৫১ বিশিষ্ট কমিটি দেয় তৎকালীন কমিটি। সেই কমিটিতে আমি সভাপতি ও সুমন রেজা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই। কমিটির পর থেকে আমরা সুন্দরভাবে দল পরিচালনা করি। তবে গত কয়েক বছর আগে আমি স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটিতে গেলেও সুমন রেজা কোনো কমিটি যায়নি।
সদর থানা ছাত্রলীগের কমিটির সর্বশেষ কি অবস্থা জানতে চাইলে জুয়েল রানা বলেন, ২০১০ সালে মানে ১৫ বছর আগের কমিটিতে আমরা ছিলাম। আমাদের কমিটির পর আর কোনো দেওয়া হয়নি। আপনার এই কমিটি আছে কি নেই এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন্দ্র থেকে কিংবা জেলা থেকে আমাদের কমিটি বাতিলের কোনো নির্দেশনা আমরা পায়নি। গত ৫ আগষ্টের আগেও পায়নি। আর এখন তো ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ, কোনো কার্যক্রম নেই।
এবিষয়ে মানববন্ধনে ছাত্রলীগ নেতা সুমন রেজাকে আপনি কার পক্ষে এই মানববন্ধনে এসেছেন, এসময় তিনি বলেন, আমি জামায়াতের পক্ষ থেকে এসেছি।
সুমন রেজা আরও বলেন, যে পুলিশ সুপার আসতেছে, বিগত সরকারের দোসর হিসেবে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তিনি নিযুক্ত ছিলো আমরা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। বর্তমানে চুয়াডাঙ্গা সুন্দর আছে, ভালো আছে। আমি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, তারা যেন বর্তমান পুলিশ সুপার যিনি আছেন তাকেই যেন বহাল রাখেন।
এবিষয়ে মানববন্ধন চলাকালে দুজন জামায়াত নেতার সাথে সুমন রেজার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তারা নাম বলেননি এবং কোনো বক্তব্যও দেননি।
জানা যায়, ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) ’র উপ-পুলিশ কমিশনার গৌতম কুমার বিশ্বাসকে গত ১১ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিভাগের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখা থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। একই প্রজ্ঞাপনে বর্তমান পুলিশ সুপার গোলাম মওলাকে বদলী করে সদর দপ্তরে সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।
এই আদেশের তিনদিন পর অর্থাৎ গত রোববার সকাল সাড়ে দশটায় চুয়াডাঙ্গায় আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াত ইসলামীর নেতাকর্মীরা ‘চুয়াডাঙ্গাবাসীর ব্যানারে’ এই মানববন্ধন করেন। তবে এই মানববন্ধনে বিএনপির কোনো নেতাকর্মীকে অংশ নিতে দেখা যায়নি।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বক্তারা বলেন, সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গায় পদায়ন করা পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে চিহ্নিত। তিনি পাবনা ও ঢাকায় চাকরিরত অবস্থায় সাধারন মানুষের ওপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালিয়েছে। এমনকি জুলাই আন্দোলনে সাধারন শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমন একজন পুলিশ অফিসারকে চুয়াডাঙ্গার মানুষ মেনে নিবে না। চুয়াডাঙ্গাবাসী কোন ফ্যাসিস্ট চায় না, আমরা মানবিক পুলিশ সুপার চায়। অনতিবিলম্বে এই আদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান তারা।
মানববন্ধননে এবি পার্টি, এনসিপি ও জামায়াত ইসলামীর নেতৃবৃন্দসহ শিবিরের নেতাকর্মীদেরও দেখা যায়। এছাড়া এই মানববন্ধনে কয়েকজন ছোট বাচ্ছাকে দেখা যায়। তাদের কথা বলতে গেলে তারা কথা বলতে চাই না। তবে আবু হুরায়রা নামের একজন স্কুলছাত্র বলেন, আমি শিবির করি। ক্লাস সেভেন পড়ি। তুমি ছোট মানুষ এই মানববন্ধনে কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সে উত্তর গুলিয়ে ফেলে।
তবে ছাত্রলীগ নেতার বিষয়ে এবি পার্টির চুয়াডাঙ্গা জেলার সভাপতি আলমগীর হোসেন, জেলা এনসিপির যুগ্ম সমন্বয়কারী সমির হোসেন কোনো মন্তব্য করেননি। তবে তারা সদ্য পদায়ন হওয়া পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাসের আদেশ প্রত্যাহার চান। তারা বলেন, সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গায় পদায়ন করা পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ্বাস ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে চিহ্নিত। আমরা তার আদেশ বাতিল চাই।
এদিকে, এসপি গৌতম কুমার বিশ্বাসের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায় তিনি বর্তমানে ঢাকা মিরপুর জোনের ডিসি হিসেবে কর্মরত। তার গ্রামের বাড়ী মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলার ধনেশ্বরগাতী ইউনিয়নে। তার বাবা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বলেও জানা গেছে।
এবিষয়ে বক্তব্য নিতে এসপি গৌতম কুমার বিশ্বাসের মোবাইলে কল দেওয়া হলে তিনি বলেন, ‘ভাই আমি সিনিয়র স্যারদের সাথে একটা মিটিংয়ে আছি। আমি ফ্রি হয়েই আপনাকে কল দিচ্ছি।’