কুষ্টিয়ায় মামলার ভয় দেখিয়ে বিভিন্নজনের কাছে চাঁদা দাবি করছে একটি চক্র। চক্রটি মনগড়া মামলার এজাহারের কপি তৈরি করে। সেখানে বিত্তবান ব্যক্তি ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে আসামির তালিকায় রাখে। পরে এজাহারের কপি পাঠিয়ে মামলার ভয় দেখি চাঁদা দাবি করে আসছে।
টাকা না দিলে যৌথ বাহিনী দিয়ে গ্রেপ্তার করানোর হুমকিও দিচ্ছে অসাধু চক্রটি। এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে একটি সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, কুষ্টিয়ার ধনাঢ্য দুই ব্যক্তিকে এমন একটি এজাহারের কপি পাঠানো হয়েছে। এজাহারে বাদীর জায়গায় মাহামুদুল হাসান রোমান নামের এক ব্যক্তির নাম আছে। কুষ্টিয়া সদর মডেল থানার জন্য প্রস্তুত করা এজাহারে আসামির তালিকায় আওয়ামী লীগ নেতা, শিক্ষক, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ মোট ৬০ জনের নাম আছে। সেখানে ৪০ ও ৪১ নম্বরে কুষ্টিয়া শহরের জুগিয়া এলাকার আনন্দ কুমার পালের দুই ছেলে পলাশ কুমার পাল ও মিলন কুমার পালের নাম দেখা যায়।
এ বিষয়ে পলাশ কুমার জানান, ৯ অক্টোবর বিকেলে এক ব্যক্তি ফোন করে মামলায় আসামি হওয়ার কথা জানান। তখন তিনি একটু ঘাবড়ে যান। কথা প্রসঙ্গে ফোনের অপর প্রান্তের ব্যক্তি বিষয়টি মিটিয়ে দেবেন বলে জানান। কথোপকথনের একপর্যায়ে তার আচরণে সন্দেহ হয়। পরে পুরো ঘটনা পুলিশকে জানিয়েছেন পলাশ।
এদিকে গত শুক্রবার (১১ অক্টোবর) রাতে কুষ্টিয়ার ধনাঢ্য দুই শিল্পপতির কাছে ওই এজাহারের একটি কপি পাঠানো হয়। একই বাদীর নামে প্রস্তুত করা ওই এজাহারে আসামির তালিকায় তাদের দুই ভাইয়ের নাম দেওয়া হয়েছে। তারাও আতঙ্কে আছেন বলে জানিয়েছেন।
কুষ্টিয়া ডিস্ট্রিক্ট পুলিশ নামের ফেসবুক পেজে পোস্ট করা সতর্ক বার্তায় বলা হয়, ‘ইদানিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন স্থানে কিছু অসাধু চক্র মামলার এজাহারের কপি তৈরি করে মামলায় আসামি করে বিভিন্নজনের কাছে ফোন করে চাঁদা দাবি করছে। টাকা না দিলে যৌথ বাহিনী দিয়ে গ্রেপ্তার করানোর হুমকিও দিচ্ছে অসাধু চক্রটি। তৈরি করা এজাহারে শিক্ষক, বেসরকারি চাকরিজীবী ও শহরের ধনাঢ্য ব্যবসায়ীদের আসামি করে তাদের মুঠোফোনে পাঠানো হচ্ছে। পরে ফোন করে চাঁদাবাজি করছে। জনগণকে এই অসাধু চক্রের কবল থেকে দূরে থাকার জন্য জেলা পুলিশ, কুষ্টিয়ার পক্ষ থেকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হচ্ছে। কেউ আপনাকে তৈরি করা এজাহারের বা অন্য কোনো মিথ্যা তথ্য দিয়ে টাকা চাইলে দেবেন না এবং বিভ্রান্ত না হয়ে নিকটস্থ থানায় এবং নিম্নোক্ত নম্বরে অবিলম্বে যোগাযোগ করুন। অসাধু চক্রটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
গত বুধবার (৯ অক্টোবর) বিকেলে পলাশ কুমারের মোবাইলে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি কল করে তাদের দুই ভাইয়ের নামে মামলা হচ্ছে বলে জানান। পরে পলাশ ওই ব্যক্তিকে ফিরতি কল করে সহযোগিতা চাইলে তিনি টাকা চান এবং রাত ১১টার মধ্যে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। কথোপকথনে অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তি বাদী তার পূর্বপরিচিত উল্লেখ করে রাজনৈতিক বিভিন্ন পরিস্থিতি উল্লেখ করেন। এ বিষয়ে জানতে পলাশকে কল করা ওই নম্বরে কল করা হলে সেটি ধরা হয়নি। তবে পুলিশ বলছে, মাহামুদুল হাসান নামের যেই বাদীর কথা তাদের বলা হয়েছে এ নামে কেউ থানায় কোনো এজাহার দেননি। ভুয়া এজাহারের কথা বলে চাঁদাবাজির বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে।
আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি করা মোবাইল নম্বরটি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বামনপাড়া গ্রামের আবদুস সামাদের ছেলে শাবাবুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে তিনি জানান, কারো কাছে এভাবে কোনো টাকা চাওয়া হয়নি। সাদ্দাম নামের এক ব্যক্তি সব জানেন। তবে সাদ্দাম নামের ওই ব্যক্তির মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে এজাহারে উল্লিখিত বাদী মাহামুদুল হাসান রোমানের ঠিকানায় ওই নামের কাউকে পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাফুজুল হক চৌধুরী বলেন, মাহামুদুল হাসান রোমান নামের কেউ বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দেননি। ওই মামলা নিয়ে আমার কিছুই জানা নেই।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিজানুর রহমান বলেন, একটি অসাধু চক্র মামলার ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে চাঁদা দাবি করছে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে পুলিশ। চক্রের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।