Home » বৃষ্টির পানি জমে সড়ক যেন নদী, চরম দুর্ভোগে কুষ্টিয়ার মানুষ

বৃষ্টির পানি জমে সড়ক যেন নদী, চরম দুর্ভোগে কুষ্টিয়ার মানুষ

কর্তৃক Shariar Imran Mati
নিজস্ব প্রতিবেদক 79 ভিউ
Print Friendly, PDF & Email

জেলা প্রতিনিধি
কুষ্টিয়া

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে সারা দেশেই থেমে থেমে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে, সেইসঙ্গে বইছে ঝড়ো হাওয়া। কুষ্টিয়া শহরেও পড়েছে এর প্রভাব, বৃষ্টির পানিতে শহরজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। জেলায় শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে রোববার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শহরের ড্রেনেজ ব্যবস্থার অচল অবস্থার কারণে সামান্য বৃষ্টিতে পানির নিচে তলিয়ে গেছে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো। বৃষ্টি হলে সড়কগুলো যেন পরিণত হয় নদীতে, জমে যায় হাঁটুসমান পানি।

এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা দুর্ভোগে পড়ছেন সবচেয়ে বেশি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বছরের পর বছর ধরে তাদের এমন ভোগান্তি পোহাতে হয়। পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেনেজ সুব্যবস্থা নেই। এমন পরিস্থিতিতে এ সমস্যা সমাধানের দাবি জানিয়েছেন তারা।

এ চিত্র শহরের কলেজ মোড়, র‌্যাব গলির অর্জুন দাস আগরওয়ালা সড়ক, র‌্যাব গলি, কাটাইখানা মোড়, কোর্টপাড়া, সদর হাসপাতালের সামনের সড়ক, জামতলা মোড়সহ পৌরসভার আওতাধীন বেশ কয়েকটি এলাকার। বৃষ্টিপাত হলেই সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে পৌরবাসী।

পৌর বাসিন্দারা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে সামান্য বৃষ্টিতেই কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সড়ক পরিণত হয় নদীতে। পৌর কর্তৃপক্ষ নালা নির্মাণ করলেও তাদের ভুল পরিকল্পনায় তা কোনো কাজে আসছে না। জলাবদ্ধতার কারণে চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছি আমরা। সংস্কারের অভাবে কিছু কিছু জায়গায় নালাগুলোতে বন্ধ হয়ে গেছে। নানা কারণে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। নালার ময়লা-আবর্জনা বৃষ্টির পানির সঙ্গে সড়কে উঠে আসছে। এ ছাড়াও ভারী বৃষ্টি হলে নালার নোংরা পানি সড়কের পাশের বাড়িতেও ঢুকে পড়ছে। সঠিক পরিকল্পনা করে নালাগুলো পুনর্র্নিমাণ করে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতেও দাবি জানান তারা।

 

কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের সামনের রাস্তায় হাঁটুসমান পানি জমেছে। ওই কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই কলেজের সামনের রাস্তায় হাঁটুসমান পানি জমে যায়। এতে আমাদের খুব ভোগান্তি পোহাতে হয়। বছরের পর বছর ধরে বৃষ্টি হলেই এই সড়কে পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। এ ছাড়াও কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন সড়ক অলিগলি ও হাট-বাজারগুলোর জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। ফলে বিপাকে পড়েন মানুষ। বাসা-বাড়িতেও পানি ঢুকে পড়ে। শুধু পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও ভুল পরিকল্পনায় তার খেসারত আমাদের দিতে হচ্ছে। দীর্ঘদিনের এই সমস্যা সমাধানের দাবি জানাচ্ছি আমরা।
কলেজ মোড় থেকে র‌্যাব অফিস পর্যন্ত সড়কটি পানিতে তলিয়ে গেছে। হাঁটুপানির মধ্য দিয়ে যাতায়াত করছে পথচারীরা। তারা বলেন, কুষ্টিয়া পৌরসভার কর্তৃপক্ষ কোটি কোটি টাকা খরচ করে নালা সংস্কারের কাজ করে। তবুও সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে যাচ্ছে সড়কে। পৌর কর্তৃপক্ষ নালা নির্মাণ করলেও তাদের ভুল পরিকল্পনায় তা কোনো কাজে আসছে না। জলাবদ্ধতার কারণে চরম ভোগান্তির মধ্যে রয়েছি আমরা। বৃষ্টি হলেই চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এমন ভোগান্তি থেকে আমরা মুক্তি চাই।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, অনেক বছর ধরে আমরা দেখছি অল্প বৃষ্টি হলেও রাস্তাগুলোতে পানি জমে যায়। হেঁটে চলাচল করা যায় না। এ ছাড়াও বৃষ্টি হলেই রিকশা ও অটোরিকশার চালকরা ভাড়া বাড়িয়ে দেয়। ২০ টাকার ভাড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা হয়ে যায়। শুধু সড়কে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতার কারণে। বৃষ্টি হলে শহরজুড়েই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চাই।

এলাকাবাসী জানান, শহরের বিভিন্ন জায়গায় পৌর কর্তৃপক্ষ নালা নির্মাণ করেছে ঠিকই, কিন্তু তা কোনো কাজে আসছে না। নালাগুলো অগভীর। আর তা মাটিতে ভরে গেছে। এ কারণে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। নালার ময়লা-আবর্জনা বৃষ্টির পানির সঙ্গে সড়কে উঠে আসে। এ ছাড়া মুষলধারে বৃষ্টি হলে নালার নোংরা পানি সড়কের পাশের বাড়িতেও ঢুকে পড়ে। তখন অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ মানুষদের।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জুবাইর মাহবুব জলাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে বলেন, অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া নালাগুলো বহু আগের পরিকল্পনায় করা। এই সময়ে এসে তা কাজে আসছে না। অন্যদিকে অবৈধ দখলদারদের জন্য নালার মুখ কিছু কিছু জায়গায় বন্ধ হয়ে গেছে। যার ফলে পানি যেতে পারছে না। দ্রুতই সঠিক পরিকল্পনা করে কাজগুলো করা হবে। তারপর জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে শহরবাসী।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও পৌরসভার প্রশাসক শারমিন আখতারের মুঠোফোনে কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

প্রসঙ্গত, নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল, থেমে থেমে হচ্ছে ভারী বৃষ্টি, সেইসঙ্গে বইছে ঝড়ো হাওয়া। এ অবস্থায় চার সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর মধ্যেই শনিবার বিকেল থেকে রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৩টা পর্যন্ত কুষ্টিয়ায় ১২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। কুষ্টিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন আর রশিদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

 

০ কমেন্ট

রিলেটেড পোস্ট

মতামত দিন


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.