মেহেরপুরের শহর ও গ্রামীণ এলাকায় দিন দিন বেড়ে চলেছে কালোমুখী হনুমানের উপস্থিতি। খাবারের সন্ধানে দল বেঁধে তারা প্রবেশ করছে বসতবাড়ি, খাবারের দোকান, এমনকি শহরের ব্যস্ত সড়কের পাশেও। মৌসুমি ফলের মৌসুম শেষ হওয়ায় গাছে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। আর সেই সুযোগেই মানুষঘেঁষা পরিবেশে ঘাঁটি গেড়েছে এই বিপন্ন প্রাণী। মেহেরপুর বন বিভাগ জানায়, বর্তমানে জেলায় আনুমানিক ২৩০টি কালোমুখী হনুমান রয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছর থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত প্রতিবছর ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল এদের খাদ্যের জন্য। সেই বরাদ্দে ঠিকাদারের মাধ্যমে হনুমানদের জন্য নির্দিষ্ট খাবার সরবরাহ করা হতো। তবে গত বছর থেকে বরাদ্দ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে খাবারের জন্য এরা ছুটছে লোকালয়ে। ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা এসটি হামিম হায়দার বলেন, “বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন আর খাবার দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে হনুমানগুলো শহরমুখী হচ্ছে। এতে মানুষের জন্যও ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।” স্থানীয় কৃষকরা জানান, গত এক দশকে সীমান্তবর্তী সদর, মুজিবনগর ও গাংনী উপজেলার গ্রামীণ বনভূমি কেটে সেখানে তৈরি হয়েছে কৃষিজমি ও ইটভাটা। কেটে ফেলা হয়েছে শিমুল, আম, জাম, কাঁঠালসহ বিভিন্ন ফলজ গাছ, যা ছিল হনুমানদের প্রধান খাদ্য উৎস। ফলে তারা বনে টিকে থাকতে না পেরে বাধ্য হচ্ছে লোকালয়ে প্রবেশ করতে। মেহেরপুর শহরের বাসিন্দা মৌসুমি ঢালি জানান, “প্রতিদিনই ছাদে দল বেঁধে আসে কালোমুখী হনুমান। বাড়িতে থাকা রুটি-বিস্কুট খেতে দিই। পথচারীরাও অনেক সময় তাদের খাবার দেয়।” তবে প্রাণিবিদদের মতে, এই অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর। কারণ, প্রাকৃতিক খাদ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা মানুষের উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাদিয়া ইসলাম বলেন, “কালোমুখী হনুমান কেবল একটি প্রাণি নয়, এটি পুরো বাস্তুতন্ত্রের অংশ। যদিও তারা লোকালয়ের প্রাণি নয়, কিন্তু খাদ্য সংকটে পড়লে বাধ্য হয়ে শহরে আসে। সরকার চাইলে খুব সহজেই সীমিত খরচে তাদের জন্য খাবার ও বসবাস উপযোগী অঞ্চল তৈরি করতে পারে। সামাজিক সংগঠনগুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে।” বিশেষজ্ঞদের মতে, বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাস গড়ে তোলা ও প্রাকৃতিক খাদ্য উৎস ফিরিয়ে আনা এখন জরুরি। প্রয়োজনে বনভূমি পুনর্গঠন, ফলজ গাছ রোপণ ও নিয়মিত খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। নইলে ক্রমশ মানুষ ও প্রাণীর মধ্যে সংঘাত বাড়তে থাকবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট