মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার ধানখোলা ইউনিয়নে সরকার নির্ধারিত বিসিআইসি সারের সরবরাহে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে এখানে মেহেরপুর জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ধানখোলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আখেরুজ্জামানের দেওয়া টোকেন ছাড়া কোনো কৃষক সার পাচ্ছেন না। ফলে টোকেনবিহীন প্রকৃত কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন, আর টোকেনধারীরা রাজনৈতিক প্রভাবের জোরে সহজেই সার সংগ্রহ করছেন। ধানখোলা ইউনিয়নের সরকারি অনুমোদিত ডিলার মেসার্স এন আর এন্টারপ্রাইজ-এর বিক্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অর্ধশতাধিক কৃষক সার পাওয়ার আশায় লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। অনেকেই কয়েকদিন ধরে অপেক্ষা করেও সার পাননি। তাদের অভিযোগ, বিএনপি নেতা আখেরুজ্জামানের দেওয়া টোকেন ছাড়া কাউকেই সার দিচ্ছে না ডিলার পয়েন্ট। পাকুরিয়া গ্রামের কৃষক বুলবুল হোসেন বলেন, “চেয়ারম্যান আখেরুজ্জামান আমাকে ও আকবর হোসেনকে সার নেওয়ার টোকেন দিয়েছেন। সেই টোকেন দেখিয়ে আজ সার নিতে এসেছি।” কিন্তু একই গ্রামের আরেক কৃষক আশরাফুল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমি কয়েকদিন ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু টোকেন না থাকায় সার পাচ্ছি না। অথচ যাদের টোকেন আছে, তারা অনেকে কৃষকও নয়, তবুও সহজেই সার পাচ্ছে।” গাড়াডোব গ্রামের কৃষক শাহীন আলম বলেন, “সারের নামে এখন টোকেন বাণিজ্য চলছে। যাদের পরিচয় বা রাজনৈতিক প্রভাব আছে, তারাই সার পাচ্ছে। বাকি কৃষকেরা বঞ্চিত। এই অবস্থা চলতে থাকলে আমরা চাষাবাদে বড় ক্ষতির মুখে পড়ব।” ডিলার প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মনিরুজ্জামান টোকেন ব্যবস্থার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, “সারের সংকট রয়েছে। অযথা ভিড় ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে সাবেক চেয়ারম্যান আখেরুজ্জামানের দেওয়া টোকেন অনুযায়ী সার বিতরণ করা হচ্ছে।” তবে প্রতিষ্ঠানটির মালিক এনামুল হোসেন ভিন্ন কথা বলেন, “আমরা সীমিত পরিমাণে সার বরাদ্দ পেয়েছি। কিন্তু কাউকে টোকেনের ভিত্তিতে সার দেওয়া হচ্ছে না।” জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান আখেরুজ্জামান অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “প্রকৃত কৃষকদের মাঝে সুষ্ঠুভাবে সার বিতরণ নিশ্চিত করতেই আমরা টোকেন ব্যবস্থা করেছি। এতে কৃষকদের উপকারই হচ্ছে।” তবে স্থানীয়দের মতে, এই টোকেন এখন এক ধরনের ‘রাজনৈতিক প্রভাবের
প্রতীক’ হয়ে উঠেছে। ইউনিয়নের অনেক কৃষক বলেন, যাদের সঙ্গে সাবেক চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠতা আছে, তারাই সহজে টোকেন পান। ফলে একজন জনপ্রতিনিধির প্রভাব ব্যবহার করে সার বণ্টনে অসমতা তৈরি হচ্ছে। ধানখোলা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাঈমুর রহমান বলেন, “এখানে রাজনৈতিক প্রভাব এতটাই প্রবল যে আমরা সার বিতরণে হস্তক্ষেপ করতে পারছি না। আমার চাকরি চলে গেলেও ওই ব্লকের দায়িত্ব নিতে পারব না।”একজন সরকারি কর্মকর্তার এমন বক্তব্য স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এ বিষয়ে জানতে গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ধানখোলা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এখন শীতকালীন ফসলের প্রস্তুতি চলছে। এই সময়ে সার না পেলে কৃষকদের চাষাবাদ ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। অনেকেই বলছেন, সরকারি সার বিতরণ ব্যবস্থায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না কমলে ভবিষ্যতে সাধারণ কৃষকরা আরও বিপদে পড়বেন। স্থানীয় সচেতন মহল মনে করছে, সরকারের স্বচ্ছ সার বিতরণ নীতিমালা অনুসারে প্রকৃত কৃষকদের তালিকা ও বরাদ্দ নিশ্চিত করে পর্যবেক্ষণ জোরদার না করলে এই অনিয়ম বন্ধ হবে না।