নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মেহেরপুর পৌরসভার ভূগর্ভস্থ পানি শোধনাগার নির্মাণ শেষ হওয়ার দুই বছর পার হলেও এখনো চালু হয়নি। ফলে পৌর এলাকার ১ লাখ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দুর্গন্ধময়, ময়লা ও কেঁচোযুক্ত পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। পানির এ নাজুক পরিস্থিতি ঘরে ঘরে চর্মরোগ ও পেটের অসুখ বাড়িয়ে দিয়েছে। পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পশুহাটের পাশে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে পানি শোধনাগারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ সময় ধরে কাজ শেষে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে তা সম্পন্ন হয়। দুই বছরের ট্রায়াল শেষে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই) এটি পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করে। কিন্তু প্রায় ১০ মাস পার হলেও শোধনাগারটি চালু হয়নি। ব্যবহার না হওয়ায় ট্যাংক, পাইপলাইন, জেনারেটরসহ বৈদ্যুতিক যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পৌর এলাকার মানুষ জানান, তারা প্রতিদিনই নোংরা ও দুর্গন্ধময় পানি পাচ্ছেন। পানির সঙ্গে কেঁচো, ময়লা ও কাদা মেশানো অবস্থায় আসে। অনেকেই বাধ্য হয়ে দূর থেকে ফিল্টার করা পানি এনে পান করছেন।
কলেজপাড়ার খাদিজা আক্তার বলেন, “পানির লাইনে কেঁচো বের হয়। দুর্গন্ধ তো নিত্যসঙ্গী। এভাবে আর কতদিন চলবে?” রেশমি খাতুন বলেন, “ পৌর পানি সরবরহ লাইনে এখন ভালো পানি পাই না। তাই ডিপিএইচইয়ের ফিল্টার করা পানি কিনে খেতে হয়।” ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রহমতুল্লাহ বলেন, “এই নোংরা পানি ব্যবহার করে চর্মরোগ, পেটের অসুখ বেড়ে গেছে। বাধ্য হয়ে আমরা এটিই ব্যবহার করছি। কোটি টাকার শোধনাগারটি অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।” মেহেরপুর পৌরসভার প্রকৌশলী আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, “শোধনাগার চালানোর মতো প্রশিক্ষিত জনবল নেই। এছাড়া যান্ত্রিক ত্রুটিও রয়েছে। পাইপলাইন ব্লক হয়ে গেছে, কোথাও লিকেজ, কোথাও আবার ফেটে যাচ্ছে। তাই চাপ দিলে পানি ধরে না।”তিনি আরও বলেন, “ডিপিএইচইকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। দ্রুত সমস্যার সমাধান করে শোধনাগার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
মেহেরপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন বলেন, “শোধনাগারটি আমরা পৌরসভার কাছে হস্তান্তর করেছি। রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্ব এখন পৌরসভার। তবে পাইপলাইনের কিছু স্থানে মেরামতের প্রয়োজন আছেÑএ কারণেই হয়তো তারা বিলম্ব করছে।” স্থানীয়দের অভিযোগÑঅদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা ও নজরদারির অভাবে কোটি টাকার সরকারি স্থাপনা এখন মেহেরপুর পৌরসভার ‘বোঝা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে পরিষ্কার পানির অভাবে জনদুর্ভোগ চরমে উঠলেও কার্যকর উদ্যোগ নেই কোনো পক্ষেরই।
মেহেরপুরে ১০ কোটি টাকার শোধনাগার ২ বছর ধরে অচল দুর্গন্ধময় পানি-কেঁচোয় অতিষ্ঠ ১ লাখ মানুষ

