Home » মেহেরপুরে সাত মাসে ৩৩ নারী আটক, হোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে

আয়ের প্রলোভনের ফাঁদে সীমান্ত পেরিয়ে মাদকের বোঝা টানছেন নারীরা

মেহেরপুরে সাত মাসে ৩৩ নারী আটক, হোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে

কর্তৃক Mahabobul Haque Polen
নিজস্ব প্রতিবেদক 27 ভিউ
Print Friendly, PDF & Email

মেহেরপুর সীমান্ত পেরিয়ে আসা মাদকের বোঝা এখন বইছেন নারীরা। কেউ দেহে লুকিয়ে বহন করছেন, কেউবা শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত খুচরা বিক্রি করছেন। গেল ছয় মাসে (এপ্রিল- আক্টোবর) জেলায় মাদক বহন ও বিক্রির অভিযোগে ৩৩ নারীকে আটক করেছে পুলিশ, র‌্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। আটক নারীদের মধ্যে কারও বয়স ২২, কারও ৪০ পেরিয়েছে। কেউ প্রথমবার নয়, কেউ দ্বিতীয় বা তৃতীয়বারের মতো ধরা পড়েছেন। অধিকাংশই স্থানীয়, দরিদ্র ও অল্পশিক্ষিত নারী। কেউ দিনমজুর, কেউবা গৃহকর্মী ছিলেন। স্বল্প আয়ের জীবনে দ্রুত অর্থ উপার্জনের আশায় তারা জড়িয়ে পড়েছেন মাদকের খুচরা ব্যবসা ও পাচারে। জেলার গাংনী উপজেলার কাজিপুর, তেকালা, বামুন্দি, মেহেরপুর সদরের শালিকা ও বাজিতপুর এবং মুজিবনগরের সোনাপুর সীমান্ত এখন মাদক পাচারের নিরাপদ পথ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভারত থেকে নিয়মিত ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা ও বিদেশি মদ আসে এ পথে। স্থানীয় একটি চক্র এসব মাদক সংগ্রহ করে খুচরা বিক্রির নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে। তারা বেশি আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে দরিদ্র নারীদের নিয়োগ দিচ্ছে বাহক বা বিক্রেতা হিসেবে। মেহেরপুর সদরের এক নারী, যিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন, দ্বিতীয়বারের মতো ধরা পড়েন গত আগস্টে। পুলিশের তথ্যমতে, তিনি প্রতি সপ্তাহে দুবার সীমান্ত থেকে মাদক এনে শহরে পৌঁছে দিতেন। প্রতিবার কাজের বিনিময়ে পেতেন ১২শ থেকে ১৫শ টাকা। স্থানীয় সমাজকর্মীদের মতে, মেহেরপুর অঞ্চলে নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ অপ্রতুল। দিনমজুর বা গৃহকর্মীর বাইরে বিকল্প জীবিকা নেই বললেই চলে। কাজ পেলেও পুরুষের তুলনায় পান কম মজুরি। ফলে অনেকে সহজ অর্থের লোভে মাদকের জালে জড়িয়ে পড়ছেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক বিদ্যুৎ বিহারী নাথ বলেন, “দারিদ্র্য, বেকারত্ব, পারিবারিক সহিংসতা ও সহজে অর্থ আয়ের আকাঙ্ক্ষা—এই চারটি কারণ নারীদের এই পথে ঠেলে দিচ্ছে। অনেকে জানেন না, তারা ব্যবহার হচ্ছেন।” মেহেরপুর পৌর কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক ফররুখ আহমেদ বলেন, “ মাদকে জরিত নারীদের শুধু আইনের আওতায় আনলে হবেনা। তারা যেন সুন্দর জীবনে ফিরে আসতে পারে তার জন্য বিকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিনুর রহমান খান বলেন, “গত সাত মাসে বিভিন্ন মাদকসহ ৩৩ নারীকে আটক করা হয়েছে। তবে মূল চক্রের হোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদের বিচারের আওতায় না আনলে এ প্রবণতা বন্ধ হবে না।”

০ কমেন্ট

রিলেটেড পোস্ট

মতামত দিন


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.