গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আবাদে মেহেরপুরের কৃষকরা এবার পড়েছেন চরম বিপাকে। নির্ধারিত সময়ে বীজ না পাওয়ায় জেলার তিন উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার কৃষক আবাদে লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন। কৃষকদের অভিযোগ মানহীন বীজ সরবরাহ ও দরপত্রে অনিয়ম হয়েছে। এ নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দায় নিতে অনীহা প্রকাশ করেছেন। গত জুলাই মাসে গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ বীজ রোপণের কথা থাকলেও সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কৃষকরা বীজ পাননি। ফলে তাদের মনে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে। মেহেরপুর সদর উপজেলার মোনাখালি গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন বলেন, “এখন বীজ নিলেও কোনো লাভ নেই। কারণ বীজ লাগানোর মৌসুম পার হয়ে গেছে। গতবারও দেরিতে প্রণোদনার বীজ পেয়ে লোকসানে পড়েছি।” জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার ১০ হাজার কৃষকের জন্য তিন কোটি ৪০ লাখ টাকার পেঁয়াজ বীজ বরাদ্দ দেয় সরকার। কিন্তু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের একক সিদ্ধান্তে নির্দিষ্ট একটি কোম্পানি থেকে বীজ কেনা হয়। পরীক্ষায় দেখা গেছে, মুজিবনগরে ৬৬ শতাংশ, সদরে ৬১ শতাংশ এবং গাংনীতে ৭৪ শতাংশ বীজের অঙ্কুরোদ্গম ক্ষমতা রয়েছে। অথচ ন্যূনতম ৮৫ শতাংশ থাকার কথা। বিষয়টি প্রকাশ হলে গত ৪ আগস্ট মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ট্রাক ভর্তি বীজ গোপনে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা হয়। সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেওয়া যাবেনা। অন্যদিকে কৃষকরা প্রশ্ন তুলেছেন সেপ্টেম্বরে বীজ পেলে তারা কতটা লাভবান হবেন। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব বীজ কাগজে-কলমে বিতরণ হলেও মাঠে কোনো ফল মিলবে না। এদিকে মুজিবনগরে মানহীন বীজ ফেরত দেয়া হলেও গাংনীতে বিতরণ করা হয়েছে। এতে দরপত্র প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা কমিটির সদস্যরা দাবি করেছেন, বীজ কেনার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে তারা কিছুই জানেন না। এ দিকে বীজ কেলেঙ্কারি চলাকালেই সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা সহকর্মীদের নিয়ে কর্মদিবসে অফিস বন্ধ রেখে বীজ প্রদান কারি এক কোম্পানীর অর্থিক সহায়তায় কক্সবাজার ভ্রমণে যান এতে কৃষকরা ভোগান্তিতে পড়েন।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সামসুল আলম বলেন, “আমি জেলা কমিটিকে কোনো কোম্পানি থেকে বীজ কিনতে বলিনি। তারা নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরে বীজ ভালো না হওয়ায় ফেরত দেয়া হয়েছে।” কৃষকদের দাবি, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ আবাদে বিলম্ব ও মানহীন বীজ বিতরণের দায় কৃষি বিভাগেরকেই নিতে হবে।