মেহেরপুরে একের পর এক হত্যাকাণ্ড, রহস্যজনক মৃত্যু ও সহিংসতার ঘটনায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। চলতি বছরেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় সংঘটিত হয়েছে একাধিক নৃশংস হত্যাকাণ্ড। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব ঘটনার পেছনে পারিবারিক কলহ, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, অপরাধচক্রের সক্রিয়তা ও আইনশৃঙ্খলার দুর্বলতা সব মিলিয়েই দায়ী। ২৫ বছর বয়সী রাসেল হোসেন ছিলেন আল সানি পরিবহনের হেলপার। পরিবারের হাল ধরার স্বপ্ন নিয়ে প্রতিদিন যাত্রা করতেন বাসে। কিন্তু গত ৪ আগস্ট সেই স্বপ্ন থেমে যায় চিরতরে। বিকেলে তার নিথর দেহ পৌঁছায় মেহেরপুর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে। চালক আফজাল ও সুপারভাইজার রোকনুজ্জামান প্রথমে পরিবারকে জানান, রাসেল ভাঙ্গা এলাকায় দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। পরে তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। রাসেলের মাথা, কোমর ও উরুর গভীর ক্ষত দেখে পরিবার ও পুলিশ সন্দেহ করে এটি ‘দুর্ঘটনা’ নয়, হত্যাকাণ্ড। এর আগের ৮ মে গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামে পারিবারিক কলহের জেরে জামাতা সবুজ আহম্মেদের ছুরিকাঘাতে নিহত হন চাচাশ্বশুর ইলিয়াস হোসেন (৪৭)। একইভাবে ২৩ ফেব্রুয়ারি গাংনীর বামন্দী ইউনিয়নের ছাতিয়ান-বদিয়াপাড়া মাঠের কলাবাগান থেকে উদ্ধার হয় ভ্যানচালক আতিয়ার রহমানের রক্তাক্ত লাশ। আরও আগে, ২ জানুয়ারি গাংনীর ষোলটাকা ইউনিয়নের সহড়াবাড়ীয়া গ্রামের মাঠে গলা কাটা অবস্থায় পাওয়া যায় যুবদল নেতা আলমগীর হোসেন (৩৮)-এর মরদেহ। এসব ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অপরাধবিজ্ঞানী ড. আব্দুর রহমান বলেন, “শুধু আর্থিক সংকট নয়, সমাজে সহমর্মিতা ও নৈতিকতার ঘাটতিই এসব ঘটনার মূল কারণ। মানুষ এখন সহজেই সহিংসতার আশ্রয় নিচ্ছে।” ছহিউদ্দিন ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফররুখ আহমেদ বলেন, “অর্থনৈতিক চাপ, প্রযুক্তির অপব্যবহার ও পারিবারিক বন্ধনের দুর্বলতা মানুষের ধৈর্য কমিয়ে দিয়েছে। ছোট বিরোধও বড় সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে।”তিনি আরও বলেন, অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারলে সমাজে ভয় ও অবিশ্বাস আরও বাড়বে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কেবল কঠোর আইন দিয়ে অপরাধ দমন সম্ভব নয় দরকার সামাজিক সংগঠনগুলোর সক্রিয়তা, পারিবারিক বন্ধন মজবুতকরণ ও মূল্যবোধভিত্তিক সমাজ গঠন। তাদের ভাষায়, “যতদিন না সমাজে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সহমর্মিতা ও নৈতিক বোধ ফিরে আসবে, ততদিন সহিংসতার এই ধারা থামানো কঠিন।” মেহেরপুরে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড শুধু আইনশৃঙ্খলার দুর্বলতাই নয়, সামাজিক কাঠামোর ভাঙনকেও উন্মোচিত করেছে। এখন সময় পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র একসঙ্গে এগিয়ে এসে এই সহিংসতা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।
সামাজিক অনুশাসন ও মূল্যবোধের অবক্ষয়কেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা
মেহেরপুরে বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড:
পূর্ববর্তী পোস্ট