মেহেরপুরের কৃষকরা আগাম জাতের শিম চাষ করে ভালো ফলন ও লাভের মুখ দেখছেন, যা তাদের ভাগ্য বদলে দিচ্ছে। এটি শীতকালীন সবজি হলেও, আগাম চাষ করে তারা উচ্চ মূল্যে শিম বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন, বিশেষ করে যখন বাজারে এর চাহিদা বেশি থাকে। এবার আবহাওয়া শিম চাষের অনুকুলে থাকায় শিমের ফলন ভালো হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষি দপ্তর। কৃষকরা বলছেন, প্রতি বিঘায় সব খরচ বাদ দিয়েও লাখ টাকা আয় করা সম্ভব হচ্ছে। শীতকালীন সবজির মধ্যে অন্যতম শিম। বছর সাতেক ধরে এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে আগাম জাতের শিম। অন্যান্য ফসলের তুলনায় কম খরচে বেশী লাভ হওয়ায় দিন দিন এই আবাদে ঝুঁকছেন চাষিরা। আগাম বাজারে নামাতে পারলে ভালো দাম পাওয়া যাবে এমন প্রত্যাশা কৃষকদের। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৫৩৫ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হচ্ছে। তাছাড়া প্রায় প্রতিটি বাড়িতে মাচা কিংবা গাছে শোভা পাচ্ছে শিম। গৃহিনীরা সাংসারিক প্রয়োজন মেটানোর পর শিম বিক্রি করে তারা বাড়তি টাকা আয় করছেন। মেহেরপুর খন্দকার পাড়ার কৃষক হেলাল উদ্দীন বলেন সারিবদ্ধভাবে গর্ত খুঁড়ে কিছু গোবর সার প্রয়োগ করে শিমের বীজ বপন করতে হয়। এরপর কিছুদিন সার, সেচ ও কীটনাশক দিয়ে পরিচর্যা করলে চারাগুলো বড় হয়। এরপর বান বা মাচা তৈরী করে দিলে মাত্র ৩/৪ মাসের মধ্যেই বিক্রি করার মতো হয়ে যায় শিম। পতিত জমি বা বাড়ির আঙ্গীনায় শিম চাষ করা যায়। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চর গোয়াল গ্রামের কৃষক রাকিব হোসেনের চোখে এখন নতুন স্বপ্ন। মাত্র ১৫ শতক জমিতে শীতকালীন আগাম জাতের সিম চাষ করে তিনি লাভবান হয়েছেন। ২০ হাজার টাকা খরচ করে জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে সার, বীজ ও কীটনাশক ব্যবহার করেছেন। এরই মধ্যে তিনি জমি থেকে প্রায় ২৩ হাজার টাকার সিম বিক্রি করেছেন। মৌসুম চলাকালীন আরও ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকার সিম বিক্রির আশা করছেন তিনি। রাকিব হোসেন জানান, “আগাম জাতের সিম বাজারে তুলনামূলক ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে। খরচ উঠেই যাচ্ছে, আর লাভও হচ্ছে। আবহাওয়া ও সময় অনুকূলে থাকায় এবার ফলনও বেশ ভালো হয়েছে।” একই গ্রামের আরেক কৃষক কেরামত হোসেন বলেন, “মৌসুমের শুরুতে বাজারে সিমের চাহিদা অনেক বেশি থাকে। তাই দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। তবে সার ও কীটনাশকের দাম অনেক বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।” মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শামসুল আলম বলেন, “এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আগাম জাতের শীতকালীন সবজির উৎপাদন ভালো হয়েছে। বিশেষ করে আগাম সিম চাষে কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি কীটনাশকের সঠিক ব্যবহার, জৈব সার প্রয়োগ এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি অনুসরণ করতে।”
পূর্ববর্তী পোস্ট