Home » বাবাকে শেষ কথা কী বলেছিলেন রুমী

বাবাকে শেষ কথা কী বলেছিলেন রুমী

কর্তৃক Mahabobul Haque Polen
নিজস্ব প্রতিবেদক 33 ভিউ
Print Friendly, PDF & Email

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেত্রী জান্নাত আরা রুমী (৩২) তার বাবার সঙ্গে শেষ ফোনালাপে কিছু নিয়ে টেনশনে থাকার কথা জানিয়েছিলেন। এ ছাড়া পাসপোর্ট করতে বাড়ি ফেরার কথাও ছিল তার।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) ধানমণ্ডি থানার ওসির মাধ্যমে মেয়ের মৃত্যুর খবর পান বাবা জাকির হোসেন। মেয়ের লাশ আনতে ঢাকার উদ্দেশে হয়েছেন তিনি। জানা যায়, আজ সকালে জিগাতলা পুরাতন কাঁচাবাজার রোড এলাকায় অবস্থিত জান্নাতী ছাত্রী হোস্টেলের পঞ্চম তলা থেকে রুমীর লাশ উদ্ধার করা হয়।

‎হাজারীবাগ থানার ওসি হাফিজুর রহমান জানান, লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। এটি আত্মহত্যা নাকি হত্যাকাণ্ড, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জানা গেছে, শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের দিন দুপুরে ধানমন্ডিতে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেওয়ার অভিযোগে এক নারীকে মারধরের ঘটনায় রুমীর নাম আলোচনায় আসে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির সামনে ‘জয় বাংলা’ বলে স্লোগান দেওয়ায় ওই নারীকে মারধর করা হয়। পরে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকেই জান্নাত আরা রুমী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি ও ধমকির শিকার হচ্ছিলেন বলে দাবি করেছেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব তারেক রেজা।

ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘কিভাবে লিখবো বুঝতেছি না। আমার হাত কাঁপতেছে। আপনাদের মনে থাকার কথা, গত মাসে শেখ হাসিনার ফাঁসির রায়ের দিন ধানমন্ডি ৩২-এ ফ্যাসিস্ট ও খুনি আওয়ামীলীগাররা কী সিন ক্রিয়েট করেছিলো। সেখানে একজন জেন-জি নারীকে আপনারা দেখেছিলেন এক আওয়ামীলীগারকে (যে জিয়ার কবর খুড়তে চাইছিলো) পিটায়ে পুলিশের কাছে ধরায়ে দিতে।’

স্ট্যাটাসে তিনি আরও লেখেন, ‘সেই জেন-জি নারী গত এক মাস ধরে আওয়ামীলীগের ক্রমাগত সাইবার বুলিং, হ/ত্যা ও রেপ থ্রেটে অতিষ্ঠ হয়ে আজ রাতে আত্মহত্যা করেছে। ধানমন্ডির ভাইব্রাদারদের সাথে কথা হলো। তারা গত এক মাসে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে তার পাশে থাকার। কিন্তু সাইবার বুলিং আর ফোনকলে সারাদিন থ্রেট পাওয়ার পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো সাহায্য পাওয়া যায়নি। তবে কারোর কল্পনাতেও ছিলো না, বুলিংয়ের মাত্রা এত তীব্র যে সে আত্মহননের পথ বেছে নেবে।’

মেয়ের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা হয় রুমীর বাবার। তিনি জানান, গত ১৩ ডিসেম্বর মেয়ের সঙ্গে তার শেষবার ফোনে কথা হয়েছিল। তখন মেয়েটি বাবাকে জানিয়েছিলেন, তিনি ‘টেনশনে’ আছেন। তবে ঠিক কী নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন, তা বিস্তারিত জানাননি। জাকির হোসেন জানান, পাসপোর্ট করতে রুমীর বাড়ি আসার কথা ছিল। রুমী তার বাবাকে বাসায় একটি ব্যাংক চেক রাখা আছে বলে জানান। তিনি সেই চেকটি বাবাকে খুঁজে রাখতে বলেছিলেন। রুমী জাতীয় নাগরিক পার্টি, এনসিপির ধানমন্ডি শাখার যুগ্ম সমন্বয়কারী ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব। গণমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘প্রায় দুই মাস ধরে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়েছেন রুমী। তিনি হত্যা ও ধর্ষণের হুমকিও পেয়ে আসছিলেন। এসব কারণে গত কিছুদিন ধরে ট্রমাটাইজড ছিলেন। দলের কর্মসূচিতে এলেও বিমর্ষ থাকতেন রুমী।’ গত ১৪ নভেম্বর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ‘ঢাকা লকডাউন’ চলাকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে মধ্য বয়সী এক নারী মারধরের শিকার হন। সেই মারধরে জড়িত থাকার ঘটনায় আলোচনায় আসেন রুমী।রুমীর বর্তমান ঠিকানা, পারিবারিক পরিচয়, গ্রামের ঠিকানা সবই ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে জানান এনসিপি নেতা আরিফুল ইসলাম আদীব। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড আইডি থেকে দেওয়া সর্বশেষ স্ট্যাটাসে তিনি ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির কথা উল্লেখ করেন। ওই স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘ইয়া আল আল্লাহ, হাদি ভাইকে আমাদের খুব দরকার।’ এক দিন আগের আরেক পোস্টে একটি ছবি যোগ করে তিনি লেখেন, ‘একদিন ভোর হবে, সবাই ডাকাডাকি করবে কিন্তু আমি উঠব না..কারণ আমি ভোরে উঠি না.!’



রিলেটেড পোস্ট

মতামত দিন


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.