মেহেরপুর গাংনী উপজেলা প্রাণীসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডাঃ আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে সরকারী বরাদ্দকৃত লাম্পি স্কিন (এলএসডি) ভ্যাকসিন বিক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে। ডাঃ আলাউদ্দিন গাংনী উপজেলা প্রাণীসম্পদ ভেটেরিনারি হাসপাতালে যোগদানের পর থেকে গোপনে সরকারী বরাদ্দকৃত ঔষধ ও বিভিন্ন ভ্যাকসিন খামারীদের নিকট থেকে ৩ হাজার ৭০০ টাকা করে নিয়ে এই ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।
গাংনী উপজেলা প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর ভেটেরিনারি হাসপাতাল সুত্রে জানা গেছে, গাংনী উপজেলার বিভিন্ন খামারে গরুর সংখ্যা ৫৮ হাজার ৩৬৫টি খাসি ছাগল সংখ্যা ১ লাখ ৩ হাজার ৮৬৯, ছোট্ট ছাগলের সংখ্যা ১৪ হাজার ৭ শত ৭০, ভেড়ার সংখ্যা ২ হাজার ৯ শত ১৭টি মহিষের সংখ্যা ৬৫২টি।
স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে উপজেলা প্রাণী সম্পদ হাসপাতালে সরকারী ভাবে লাম্পি স্কিন (এলএসডি) রোগে আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার গরুর মৃত্যু হচ্ছে।
ভাইরাসজনিত এই রোগে আক্রান্তের মধ্যে ছোট বাছুরের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে যাওয়ায় গরু-বাছুর নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন খামারিসহ এলাকার হাজার হাজার কৃষক।
সরকারী বরাদ্দকৃত ভ্যাকসিন না পেয়ে অনেক খামারী অতিরিক্ত দামে বাহির থেকে ভ্যাকসিন ক্রয় করে গরুকে দিচ্ছেন। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ডাঃ আলাউদ্দিন এমন অভিযোগ খামারীদের। অভিযোগ রয়েছে তিনি বিভিন্ন ফার্মাসীতে বিশেষ সুবিধা নিয়ে গোপনে ওই ওষুধ সরবরাহ করে থাকেন।
প্রতিষেধক হিসেবে সরকারী ভাবে প্রাণীসম্পদ হাসপাতালে (এলএসডি) ভ্যাকসিন বরাদ্দ দিলেও
বিভিন্ন অজুহাতে লাম্পি স্কিন ডিজিজ-এর জন্য সরকারি কোন ভ্যাকসিন নেই বলে খামারিদের বিদায় করছেন প্রাণীসম্পদ অফিসের ওই কর্মকর্তা।
গাংনী উপজেলায় পৌরসভাসহ ৯টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার খামারী ও কৃষকের ঘরে প্রায় ২ লাখ গরু-বাছুর রয়েছে। বর্তমান সেখানে লাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব দিনদিন বাড়ছে।
এর মধ্যে কাজিপুর ইউনিয়নের কাজিপুর ,হাড়াভাঙ্গা সাহেরনগর ,ষোলটাকা উইনিয়নের কাষ্টদহ, জুগিরঘোফা,ষোলটাকা,মিনাপাড়া,সাহারবাটি ইউনিয়নের ধর্মচাকী,ভোমরদহ,হিজলবাড়ি,ধানখোলা ইউনিয়নের কসবা,যুগিন্দা ,ভাটপাড়া গ্রাম এলাকায় রোগটির প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি।
এদিকে স্থাানীয় কয়েকজন কৃষক জানিয়েছেন, লাম্পি স্কিন রোগ (এলএসডি) ছড়িয়ে পড়ায় খামারিসহ এলাকার হাজারো কৃষক চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। সরকারী হাসপাতালে ভ্যাকসিন না পেয়ে তাদের অনেকের মনে এখন ‘লাম্পি আতঙ্ক’ বিরাজ করছে। অনেক খামারী বাহির থেকে ৩ হাজার ৭০০ টাকা দরে ক্রয় করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন গরু খামারী জানান উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার যোগসাজশে প্রাণীসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আলাউদ্দিন সরকারী ঔষুধ গোপনে বিভিন্ন ফার্মাসির কাছে দিয়ে সরকারি ভ্যাকসিন ও ঔষধ বিক্রি করে আসছেন।
এছাড়াও সরকারি বেতন ভূক্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চিকিৎসাপত্রে নাম সর্বস্ব কোম্পানির ঔষধ এবং ভিটামিন পণ্য লিখে খামারীদের সাথে প্রতারণা করছে।
ভুক্তভোগী খামারিরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
এব্যাপারে উপজেলা প্রাণীসম্পদ সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডাঃ আলাউদ্দিন বাহিরে ঔষধ ও ভ্যাকসিন বিক্রয়ের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি কোন ভ্যাকসিন বাহিরে বিক্রয় করিনি যদি কেউ বলে থাকে, এটা মিথ্যা বলেছে। সরকারি বরাদ্দকৃত ভ্যাকসিন বিনামূল্যে খামারীদের দেওয়া হচ্ছে না। টাকা নেয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
সরকারী ভ্যাকসিন বাহিরে বিক্রয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোত্তালেব আলী বলেন, চলতি বছর এই প্রথম লাম্পি স্কিন ( এলএসডি) ভ্যাকসিন সরকারী ভাবে বরাদ্দ পেয়েছেন ৫৪০০ ডোজ এর মধ্যে ৪৪৯৬ ডোজ ভ্যাকসিন গরুকে দেওয়া হয়েছে। বাকি ভ্যাকসিন দেওয়ার কাজ চলমান রয়েছে। বিনামূল্যে গরু খামারীদের এই ডোজ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোত্তালেব আলী।
সরকারী ভ্যাকসিন বরাদ্দ পাওয়ার আগে জরুরী প্রয়োজনীয় কেউ কেউ ৩ হাজার টাকা বা তার চেয়ে বেশি টাকা দিয়ে ভ্যকসিন ক্রয় করে থাকতে পারে বোধগম্যের বাইরে। গাংনী পশু হাসপাতালে টাকা নেয়ার কোন সুযোগ নেই।
তিনি আরও বলেন, প্রকল্প ভুক্ত খামারির সংখ্যা ৮৪০ জন, এর মধ্যেও রেজিস্টার্ড ভুক্ত খামারিদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। প্রকল্পভুক্ত খামারির বাইরেও
এই সুবিধা দেয়া হয়েছে। সরকারি ঔষধ বাইরে বিক্রয়ের কোনো সুযোগ নেই।
যে সকল গরুকে দেয়া হয়েছে সেই সকল খামারীর তালিকা আমাদের কাছে আছে আপনারা খোঁজ নিয়ে দেখেন যদি কোন কর্মকর্তা ভ্যাকসিন বাহিরে বিক্রয় করে টাকা নেয়। আর যদি কেউ প্রমাণ দিতে পারে তাহলে তার বিরুদ্ধে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট