মাগুরায় শিশু ধর্ষণসহ সব ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত ও জনপরিসরে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীরা। রোববার দুপুর ১২টায় ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক সম্মুখে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। এসময় প্রায় আধা ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখা হয়।
এর আগে ক্যাম্পাসের বটতলা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। তারা মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে বিক্ষোভস্থলে গিয়ে অবস্থান নেয়। এসময় বিক্ষোভকারীরা ধর্ষণকারীদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতের দাবি জানান। এছাড়া শিক্ষার্থীরা মাগুরাসহ দেশে সংঘটিত সব ধর্ষণের ঘটনায় দোষীদের বিচার নিশ্চিতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারকে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ধর্ষণকারীদের শাস্তি দেওয়া না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।
বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা ‘সারা বাংলায় খবর দে, ধর্ষকদের কবর দে’, ‘দড়ি লাগলে দড়ি নে, ধর্ষকদের ফাঁসি দে’সহ বিভিন্ন শ্লোগান দেয়। এছাড়াও তারা ‘মাগুরায় ধর্ষণকাণ্ডের অভিযুক্তদের ফাঁসি চাই’, ‘ধর্ষণের বিচার মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হোক’, ‘আশ্বাস নয়, আইনের বাস্তবায়ন চাই’সহ বিভিন্ন লেখা সম্বলিত প্লাকার্ড প্রদর্শন করেন।
বিক্ষোভে নারী শিক্ষার্থী মিথিলা ফারজানা বলেন, ‘ধর্ষকদের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হবে। তাদের বাঁচিয়ে রাখার কোনো সুযোগ নেই। প্রয়োজনে আমরা মারব। এটা না হলে নারীরা কোনোভাবেই নিরাপদে চলাচল করতে পারবে না। যত নারী এবং শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে তারা যেন বিচার পায়, ক্ষতিপূরণ পায়।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির সহ-সমন্বয়ক সাদিয়া মাহমুদ মীম বলেন, ‘সবসময় শঙ্কার মধ্যে থাকি, এর পরে কি আমার পালা বা আমার রুমেমেটের অথবা কোনো রক্তের সম্পর্কের কেউ। একটা মেয়ে যার এখন খেলা করার বয়স, তার ওপর পাশবিক অত্যাচার করা হচ্ছে। আমাদের দাবি ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড যেন জনসম্মুখে নিশ্চিত করা হয়। জনসম্মুখে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করে এটা যে কতটা ভয়ঙ্কর তা যেন সবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হয়।’
সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই ধর্ষণের মতো অপরাধ বাড়ছে। এই অপরাধ বন্ধে ধর্ষকদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে হবে। স্বাভাবিক কোনো মৃত্যুদণ্ড নয়, তাদের মৃত্যুর এমন নজির স্থাপন করতে হবে যেন কোনো মানুষ আর এমন অপরাধ করার সাহস না পায়। ধর্ষকরা ধরা পড়া মাত্রই কালক্ষেপণ না করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি সরকার মাগুরার শিশুসহ সকল ধর্ষণের ঘটনায় কার্যকর পদক্ষেপ না নেয় তাহলে আরও কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। অনির্দিষ্টকালের জন্য এই মহাসড়ক অবরোধ করা হবে।’
সমন্বয়ক মুখলেসুর সহমান সুইট বলেন, ‘আমাদের মা-বোনদের ওপর যারাই ধর্ষক বা নিপীড়কের দৃষ্টিতে তাকাবে, ছাত্রসমাজের দায়িত্ব হবে তাদের সেই চোখগুলো উপড়ে ফেলা। ধর্ষকদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সরকারকে বলব ধর্ষণের ঘটনাগুলোতে দ্রুত সাড়া দেওয়ার জন্য। জুলাইয়ের আমাদের যে লড়াই শুরু হয়েছিল সেটা কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। এখনও আমাদের লড়তে হচ্ছে। ইতোমধ্যে ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে সারাদেশে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফুসে উঠেছে। এ ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটার আগেই দ্রুত ধর্ষকদের বিচার নিশ্চিতের জন্য সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি।’