মেহেরপুর জেলাতে টিএসপি সারের তীব্র সংকটে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। জমি তৈরি থাকলেও পর্যাপ্ত সার না পাওয়ায় আমন ধান ও সবজি চাষ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। ডিলারের কাছ থেকে চাহিদার তুলনায় অল্প পরিমাণ সার পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কৃষকেরা। কৃষি বিভাগ বলছে সময় মতো ডিপো থেকে সার সরবরাহ না হওয়ায় সারের সংকট দেখা দিয়েছে।
মেহেরপুর জেলা একটি কৃষি নির্ভর জেলা। এয় জেলার অর্থনিতি কৃষির উপর নির্ভরশীল। এয় জেলাতে ৪ হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। এয় সব সবজি জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের দেশের চাহিদা মেটাতে বড় একটা ভুমিকা রাখে। এবার সার সল্পতায় ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে সবজি উৎপাদন। যা জেলার গন্ডি পেরিয়ে দেশের বাজাওে প্রভাব পড়তে পারে। বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন তথ্যমতে জেলায় সারের চাহিদা ৮৪৫ টন এসেছে মাত্র ১০৩ টন। আর এ দিকে কৃষকরা বলছে সঠিক ভাবে সার না পেলে উৎপাদন খরচতো দুরের কথা ফসলই হবেনা।
উজুলপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, “জমিতে সার দিতে না পারলে ফলন ঠিকমতো হবে না। আমরা কি করব, কেউ কি দেখবে?” কলা চাষি আবেদ আলী জানান, “ডিলার লাইনে দাঁড়িয়ে একটি বস্তা পেলাম। এখন খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দ্বিগুণ দামে কিনতে হবে। উৎপাদন খরচ কীভাবে উঠবে, বুঝতে পারছি না।” গাংনীর সাহারবাটি গ্রামের আয়নাল হক ও বুড়িপোতার শহিদুল ইসলামও একই অভিযোগ করেছেন। তাদের অভিযোগ ডিলাররা ইচ্ছাকৃত ভাবে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বেশি দামে সার বিক্রি করছে, অথচ কৃষকেরা পাচ্ছেন না
বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন মেহেরপুর জেলা শাখার সভাপতি হাফিজুর রহমান জানান, গতমাসে জেলার টিএসপি সারের চাহিদা ছিল ৮৪৫ টন, কিন্তু বরাদ্দ এসেছে মাত্র ১০৩ টন। ইউরিয়া, পটাশ, ডিএপি ও এমওপি সারের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও টিএসপি ঘাটতিই বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপপরিচালক সামছুল আলম বলেন, “ডিলাররা টাকা জমা দিলেও যশোর থেকে যথাসময়ে সার পাননি। ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তবে দ্রুত এটি সমাধান হবে।” তিনি আরো বলেন, “মেহেরপুরের আবহাওয়া জনিত কারণে চার ফসলি জমি। কিন্তু সার বরাদাদ তিন ফসলের জন্য। আবার তামাক চাষের জন্য সারের কোন বরাদ্দ নেই কিন্তু মেহেরপুরের সারের একটি বড় অংশ চলে যায় তামাক চাষে। এটাও সার ঘাটতির অন্যতম একটা কারন।” মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ আবদুল ছালাম জানান, “জেলার চার ফসলি জমির কারণে অতিরিক্ত সার প্রয়োজন হয়। বরাদ্দ বাড়াতে উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করা হচ্ছে। দ্রুত সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।” কৃষকেরা মনে করছেন, প্লাবিত এলাকার অতিরিক্ত সার মেহেরপুরে সরিয়ে আনলে সংকট অনেকটা কমানো যেত। টিএসপি সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে শুধু চাষাবাদ নয়, বাজারে সবজি ও খাদ্যদ্রব্যের দামও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।