(মেহেরপুর প্রতিনিধি)
স্বামীকে তার পিতার পরিবারের সাথে সম্পর্ক রাখতে দিবে না স্ত্রীর এমন প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় আদালতে স্ত্রী তার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা যৌতুক নিরোধ আইন এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার কাথুলী ইউনিয়নে।
সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ৮ মার্চ উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া ইউনিয়নের পলাশীপাড়া গ্রামের আনারুল ইসলামের মেয়ে ফারহানা খাতুনের সাথে কাথুলী ইউনিয়নের খাসমহল গ্রামের আমজাদ আলীর ছেলে আমির হামজা’র এক লক্ষ টাকা কাবিন মূলে বিয়ে হয়।
বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই স্ত্রী ফারহানা খাতুন স্বামী আমির হামজাকে তার পিতা মাতার সাথে সম্পর্ক না রাখতে বলেন। পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে রাজী না হওয়ায় স্ত্রী ফারহানা খাতুন ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামীর ওপর মানষিক নির্যাতন শুরু করে। নির্যাতন সইতে না পেরে স্বামী আমির হামজা দেনমোহর ও খোরপোষের টাকা পরিশোধ সাপেক্ষে ২০১৩ সালের ২৬ আগস্ট তারিখে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটায়।
বিবাহ বিচ্ছেদের পর স্ত্রী ফারহানা খাতুন বাদী হয়ে মেহেরপুর বিজ্ঞ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা বের করেন। মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী স্বামী আমির হামজা খালাস পায়।
স্বামী-স্ত্রী এতোপূর্বে ভালোবাসা করে বিয়ে করেছিল। সে ভালবাসার মর্যাদা রাখতে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ৯ তারিখে উভয়ে পুনরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। কিন্তু তারপরেও স্ত্রী ফারহানা খাতুনের আচার-আচরণের কোন পরিবর্তন হয় নাই। তাছাড়া গত ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের ৭ তারিখে ফাংশনাল অবস্ট্রাকশন ইন লেফ্ট কিডনি রোগে ভুগতে শুরু করেন। এ অবস্থা দেখে স্ত্রী ফারহানা খাতুনের স্বামী আমির হামজার ওপর নির্যাতন ও অবহেলা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
স্বামী নিরুপায় হয়ে ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের ১৫ তারিখে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে খোরপোষ ও দেনমোহরের টাকা পরিশোধ সাপেক্ষে আবারো বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটায়।
বিবাহ বিচ্ছেদের পর স্ত্রী ফারহানা খাতুন ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের ২৮ তারিখে যৌতুক নিরোধ আইনে একটি মামলা দায়ের করে যার নম্বর সিআর ২৭২। ওই মামলায় মাত্র একদিন পর স্বামী আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিনের আবেদন করলে অন্তর্ভুক্তি জামিন পায়।
পরবর্তীতে স্ত্রী ২০২৪ সালের ২৪ মে তারিখে স্বামী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়েছে অভিযোগ তোলেন।
পরে ২৫ মে তারিখে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ড. এম কে রেজা’র স্বাক্ষরিত ইনজুরি সার্টিফিকেট দাখিল সাপেক্ষে জুন মাসের ১৩ তারিখে মেহেরপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে আরো একটি মামলা দায়ের করে।
২০২৪ সালের ২ জুলাই সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ইনজুরি সার্টিফিকেট প্রদানের ক্ষেত্রে তিনজন চিকিৎসক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির স্বাক্ষর থাকার বিধান থাকলেও গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার এমকে রেজা বোর্ডের অন্য সদস্যদের না জানিয়ে একক স্বাক্ষরে ইনজুরি সার্টিফিকেট প্রদান করেছেন।
ড. এমকে রেজা জানান, ঘটনার দুই দিন পর ফারহানা খাতুন নামের এক নারী আমার চেম্বারে এসে ঘটনাটি জানালে আমি তাকে চিকিৎসা দিয়েছি এবং সার্টিফিকেট প্রদান করেছি।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (RMO) আব্দুল আল মারুফ জানান, ইনজুরি সার্টিফিকেট দেয়ার ক্ষেত্রে বোর্ডের তিনজন চিকিৎসকের স্বাক্ষরের বিধান রয়েছে। তবে ফারহানা খাতুন নামের কোন সার্টিফিকেট আমার হাতে আসে নাই বা আমি স্বাক্ষর করি নাই।
স্ত্রী ফারহানা খাতুনের উল্লেখিত ঘটনাস্থলে ভাড়াটিয়া বাড়ির মালিক সাহারবাটি চারচারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোখলেসুর রহমান জানান, একই বিল্ডিং এর দ্বিতীয় তলাতে একপাশে আমি এবং অপর পাশে ফারহানা খাতুন বসবাস করে। তবে গত দুই তিন মাসের মধ্যে আমির হামজা কে তার স্ত্রীর কাছে আসতে দেখি নাই। তাহলে তার স্ত্রীকে কিভাবে নির্যাতন করে গেল এটা আমার বোধগম্য নয়। তাছাড়া তার ওপর নির্যাতনের বিষয়ে আমার বাড়ির আশেপাশের প্রতিবেশীরাও কেউ জানেনা।
স্ত্রী ফারহানা খাতুন চায় তার স্বামী যেন পিতার পরিবারের সাথে সম্পর্ক না রাখে। এমন প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় স্বামী আমির হামজার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে তার মান ক্ষুন্ন করা হয়েছে। তাছাড়া তার সরকারি চাকরি নষ্ট করে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ তুলেছে স্বামী সাহারবাটী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার আমির হামজা।