Home » গাংনীতে বিএডিসির দুই কর্মকর্তা ঘুষ নেওয়ার অপরাধের জনতার হাতে অবরুদ্ধ, পুলিশের হস্তক্ষেপে উদ্ধার

গাংনীতে বিএডিসির দুই কর্মকর্তা ঘুষ নেওয়ার অপরাধের জনতার হাতে অবরুদ্ধ, পুলিশের হস্তক্ষেপে উদ্ধার

কর্তৃক Mahabobul Haque Polen
নিজস্ব প্রতিবেদক 40 ভিউ
Print Friendly, PDF & Email

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম ও ইলেকট্রিশিয়ান দেলোয়ার হোসেনকে ঘুষ বাণিজ্য ও নানা অনিয়মের অভিযোগে ক্ষুব্ধ জনতা অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলার কড়ুইগাছি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুই কর্মকর্তাকে উদ্ধার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সেচ পাম্প ও সৌরবিদ্যুৎ বরাদ্দ দেওয়ার নামে দীর্ঘদিন ধরে ঘুষ বাণিজ্য, অনিয়ম ও পক্ষপাতমূলক আচরণের অভিযোগ করে আসছিলেন ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ। তাদের অভিযোগ—বরাদ্দের বিপরীতে অতিরিক্ত অর্থ দাবি, তালিকা প্রণয়নে স্বচ্ছতার অভাব, একই এলাকায় নিকট দূরত্বে একাধিক লাইসেন্স প্রদান, সুপারিশের নামে অনৈতিক চাঁদাবাজি এবং কৃষকদের হয়রানি ছিল দৈনন্দিন ঘটনা।

এমন অভিযোগকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কড়ুইগাছি গ্রামে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। দুপুরের দিকে ভুক্তভোগীরা বিএডিসির ওই দুই কর্মকর্তাকে ঘিরে ফেলেন এবং দীর্ঘসময় অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে এলাঙ্গী পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে অবরুদ্ধ কর্মকর্তাদের উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
গ্রামে উপস্থিত লোকজনের তোলা ভিডিও ফুটেজ দ্রুত ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি আরও আলোচনায় আসে।

কড়ুইগাছি গ্রামের কৃষক আব্দুল কাদের বলেন, ২০২৩ সালে সেচ পাম্পের জন্য আবেদন করি। বারবার মাপঝোকের কথা বলে ঘুরাতে থাকে। পরে অফিসের কর্মচারী দেলোয়ার আমার বাবাকে ১০ হাজার টাকা দিতে বলেন। টাকা না দেওয়ায় আমরা সেচ পাম্পের লাইসেন্স পাইনি। অথচ একই মাঠে মাত্র ৫০ ফুট দূরত্বে চারজন কৃষককে লাইসেন্স দিয়েছে। এসব লাইসেন্স পেয়েছে ঘুষ দিয়ে।

স্থানীয় কৃষক ঝন্টুও একই অভিযোগ তুলে বলেন, সৌরবিদ্যুৎ বরাদ্দ দেওয়ার জন্য দেলোয়ার প্রথমে ৪০ হাজার টাকা, পরে আরও ২০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে জানায় ৬০ হাজার টাকায় অন্যত্র বিক্রি করে দিয়েছে। আমরা সাধারণ কৃষক—এভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছি।

আরেক কৃষক মিয়াজান জানান, ৪০ হাজার টাকায় কথাবার্তা ঠিকঠাক হওয়ার পরও সৌরবিদ্যুৎ পাইনি। পরে জানতে পারি, বেশি টাকায় অন্যকে বরাদ্দ দিয়েছে। আমরা বছরের পর বছর ধরে আবেদন করে যাচ্ছি; কিন্তু টাকা না দিলে সুবিধা পাওয়া যায় না।

এছাড়াও বেশ কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেন, মাঠ পর্যায়ের প্রকৃত জরিপ ছাড়াই নিকট দূরত্বে একাধিক লাইসেন্স দেওয়া, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বরাদ্দ বণ্টন, এবং ফাইলে নাম তুলতে গোপনে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করা ছিল নিয়মিত ঘটনা।

অভিযোগ অস্বীকার করে ইলেকট্রিশিয়ান দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমি কাউকে কোনো টাকা দিইনি বা কারো কাছে দাবি করিনি। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।

উপসহকারী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশে আমরা একটি তদন্তে এসেছিলাম। তদন্ত করতে এসে হঠাৎ এমন উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আমরা ইউটিএম অনুযায়ী সেচ পাম্পের লাইসেন্স প্রদান করি। ৮২০ ফুট দূরত্বের নিয়ম কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়। যাদের লাইসেন্স হয়নি, তারাই নানা অভিযোগ তোলেন।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, এ বিষয়ে কোন কৃষক এখন পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত-পূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে



রিলেটেড পোস্ট

মতামত দিন


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.