Home » কুষ্টিয়ায় তিনদিন ব্যাপী ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলার সমাপনী

কুষ্টিয়ায় তিনদিন ব্যাপী ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলার সমাপনী

কর্তৃক Shariar Imran Mati
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি 34 ভিউ
Print Friendly, PDF & Email

সংবাদ ভিত্তিক জনপ্রিয় ফেসবুক পেজ ‘আপডেট কুুষ্টিয়া’ ও পাঠক নন্দিত পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক পথিকৃৎ’ এর আয়োজনে কুুষ্টিয়ায় ৬ষ্ঠ বারের মতো ৩ দিন ব্যাপী গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলার সমাপনী হয়েছে।

২৪ অক্টোবর সমাপনী দিনে বৃষ্টি উপেক্ষা করে বটতৈল ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে মনমুগ্ধকর লাঠিখেলা প্রদর্শনীর মধ্যদিয়ে শেষ হয় এই আয়োজন।

দৈনিক আন্দোলনের বাজার’ পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার ও ‘আপডেট কুুষ্টিয়া’ পেজের হেড অব এডমিন অর্পণ মাহমুদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং ওস্তাদ জানার আলীর পরিচালনায় তিনজন যন্ত্রশিল্পী সহ প্রায় দেড় শতাধিক বিভিন্ন বয়সী খেলোয়াড় এবারের খেলায় অংশগ্রহণ করেন। সুস্থ ধারার সামাজিক বিনোদন প্রদান ও মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার প্রত্যয়ে প্রতিবছর হেমন্তে ধান পাকার আগে খেলাটির আয়োজন করা হয় বলে জানান আয়োজক অর্পণ মাহমুদ।

গত বুধবার (২২ অক্টোবর) সকাল ১১ টায় কুুষ্টিয়া সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের কবুরহাট গ্রামে ৩ দিনব্যাপি লাঠি খেলার শুভ উদ্বোধন করা হয়।

লাঠিখেলাকে কেন্দ্র করে এলাকায় উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয়েছিল। ৩ দিনের এই আয়োজনে বাদ্যের তালে তালে লাঠিয়ালদের নাচ, আক্রমণ ও প্রতিরক্ষামূলক কসরত আগত দর্শকের বিমোহিত করছে। লাঠিয়ালরা দল বেঁধে ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে খেলার মাঠ বা খোলা জায়গায় তাদের কসরত দেখিয়েছেন। সাধারণ মানুষও বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে ছুটে এসে হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্য মুগ্ধ হয়ে দেখছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, কালের বিবর্তনে সামন্ত প্রভুদের খাজনা আদায়ের লাঠি এখন মানুষের বিনোদন যোগাচ্ছে। লাঠিয়ালদের কলাকৌশলও বেশ নজরকাড়া। প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করতে নানা কৌশলে লাঠি চালাচ্ছেন একপক্ষ। অন্যপক্ষও আত্মরক্ষার্থে অবলম্বন করছেন নানা কৌশল। এ যেন এক আনন্দদায়ী পাতানো যুদ্ধ!

লাঠিয়াল সাদেক আলী জানান, “পারিবারিকভাবেই আমরা লাঠিখেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত। বাপ-দাদা থেকে পাওয়া শিক্ষা এটি। ঐতিহ্যবাহী এ খেলায় যেমন দর্শকরা আনন্দ পায় তেমনি এ খেলার মাধ্যমে আত্মরক্ষার নানা দিক তুলে ধরা হয়। এ থেকে নিজের আত্মরক্ষাও শেখা যায়। তবে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে এখনও এটা টিকিয়ে রেখেছি। এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে সরকারি সহযোগিতা জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।

লাঠি খেলা দেখতে আসা এক দর্শক বলেন, “শুনেছি এক সময় আউশ ধান কাটার মৌসুম শেষ হলে লাঠি খেলায় মেতে উঠতেন গ্রামের মানুষ। বাড়ির উঠান কিংবা ধানের খোলায় আসর বসত এই লাঠি খেলার। আগে কুষ্টিয়ার আশপাশের জেলাগুলোর প্রায় প্রতিটি গ্রামে অন্তত একটি লাঠিয়াল দল ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই খেলাটি আজ প্রায় বিলুপ্ত। তাই অনেকদিন বাদে কুষ্টিয়ায় তিনদিনের লাঠি খেলা উৎসবের খবর শুনে শেষ দিনে ছুটে এসেছি।”

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) কুষ্টিয়া জেলা শাখার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, সাপ্তাহিক পথিকৃৎ পত্রিকার প্রকাশক-সম্পাদক ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এ্যাডভোকেট শামিম উল হাসান অপুু বলেন, “লাঠি খেলা দেখে আমি মুগ্ধ। বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এই খেলা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানে না। লাঠিখেলা চর্চা করলে আত্মরক্ষায় ভালো কাজ দিতে পারে।” এছাড়াও লাঠিখেলাটি চালু রাখারও আশ্বাস দেন তিনি।

কুুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আবু মনি জুবায়েদ রিপন লাঠিখেলা দেখতে এসে বলেন,” জনপ্রিয় এই খেলাটি এখন বিলুপ্তপ্রায়। তরুণ প্রজন্মকে মাদক ও মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্ত রেখে শরীর চর্চায় আগ্রহী করতে খেলাটি বিশেষ ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও তিনি খেলাটি টিকিয়ে রাখতে সকলকে পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।”

আয়োজনের শুরুতে স্থানীয় বিএনপি নেতা আব্দুল মাজেদ খেলোয়াড়দের হাতে জার্সি তুলে দিয়ে বলেন,” হারিয়ে যাওয়া খেলাটিকে বার বার আয়োজনের মাধ্যমে টিকিয়ে রাখতে হবে। এছাড়াও তিনি খেলোয়াড়দের বিশেষ পুরস্কার ঘোষণা করেন এবং আয়োজক কর্তৃপক্ষকে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

খেলার আয়োজক কমিটির সদস্য দৈনিক সময়ের কাগজের সহ-সম্পাদক ও সাপ্তাহিক পথিকৃৎ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক শাহারিয়া ইমন রুবেল জানান, “কালের বিবর্তনে বিলুপ্ত প্রায় এ লাঠিখেলা টিকিয়ে রাখতে হলে লাঠিয়ালদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি। প্রতিবছর এই উৎসবের আয়োজন করি। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন লাঠিয়ালদের উৎসাহ দেওয়া হয়, অন্যদিকে গ্রামবাসীদের বিনোদনের ব্যবস্থা করা হয়। নতুন প্রজন্ম এ খেলাটি সম্পর্কে যাতে জানতে পারে সেজন্য এই খেলাটির ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করবো।”

আয়োজক কমিটির সার্বিক তত্ত্বাবধারক গণমাধ্যমকর্মী অর্পন মাহমুদ বলেন, “কুষ্টিয়ার বিভিন্ন এলাকায় আবহমানকাল ধরে বিনোদনের খোরাক জুগিয়েছে এই লাঠিখেলা। মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত নতুন প্রজন্ম গড়তে এবং বর্তমান প্রজন্মের মোবাইলে প্রতি আসক্তি থেকে ফেরাতে এ ধরনের খেলা টিকিয়ে রাখা দরকার বলেও জানান তিনি। সবশেষ ৩ দিনের এই লাঠিখেলা সুষ্ঠু সুন্দরভাবে শেষ হওয়ায় সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

খেলার পরিচালক জানার আলী সর্দারসহ প্রবীণ লাঠিয়ালরা জানান, “তারা প্রায় দুই যুগ ধরে বিভিন্ন এলাকায় লাঠি খেলা করে থাকেন। তবে এই খেলার সঙ্গে জড়িতরা প্রায় সবাই গরিব। তারা দুঃখ-দৈনতা নিয়ে জীবনযাপন করেন। তাদের জন্য সরকারি বা বেসরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা নেই। তেমন কোনো ব্যবস্থা হলে নিয়মিত চর্চা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা এই খেলাকে আরো বড় পরিসরে মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।

০ কমেন্ট

রিলেটেড পোস্ট

মতামত দিন


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.