Home » কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভাঙনে বিলীন ৭২৮ মিটার বেড়িবাঁধ, ঝুঁকিতে মহাসড়ক

কুষ্টিয়ায় পদ্মার ভাঙনে বিলীন ৭২৮ মিটার বেড়িবাঁধ, ঝুঁকিতে মহাসড়ক

কর্তৃক Shariar Imran Mati
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি 36 ভিউ
Print Friendly, PDF & Email

কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার সাহেবনগর এলাকায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে পদ্মা নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের ৭২৮ মিটার নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকিতে পড়েছে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়ক।

পদ্মার পানির উচ্চতা গড়ে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৩ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে স্রোত আরও তীব্রভাবে কূলে আঘাত হানছে। ফলে নদী–তীরবর্তী বাসিন্দাদের মধ্যে ছড়িয়েছে ভাঙনের আতঙ্ক।

কুষ্টিয়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা বলছেন, যেভাবে নদীভাঙন হচ্ছে, তাতে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আরও ৩০ থেকে ৩৫ মিটার ভেঙে গ্রামের দিকে চলে আসার শঙ্কা আছে। তখন কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়ক থেকে নদীর দূরত্ব হবে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ মিটার। তাই বলা যায়, এই মহাসড়ক এখন ঝুঁকির মধ্যে।

কুষ্টিয়ার পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, পদ্মায় পানি কমার সঙ্গে ভাঙন তীব্র হচ্ছে। পানির স্রোতও বেশি। যেভাবে ভাঙছে তাতে মহাসড়ক খুবই ঝুঁকির মধ্যে আছে। ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাতে স্থায়ী সমাধান হচ্ছে না। নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়েছে। এতেই সমস্যা বেশি দেখা দিয়েছে।

পাউবোর ভাষ্য, মিরপুর উপজেলার কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কের পাশ দিয়ে পদ্মা নদী বয়ে গেছে। মহাসড়ক ও নদীর মাঝখানে উপজেলার মুন্সিপাড়া, সাহেবনগর, মির্জানগর ও রানাখড়িয়া এলাকা। এসব এলাকার বসতবাড়িসহ আবাদি জমি আছে। গত ৫ বছরে এসব এলাকায় অন্তত ১ হাজার ১৮৮ একর ফসলি জমি পদ্মায় বিলীন হয়েছে। চলতি মৌসুমে ইতিমধ্যে পানি বাড়ার সময় প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে ১৮৬ মিটার গ্রামের জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সবই ফসলি জমি। ১২ অক্টোবর থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ মাটির বেড়িবাঁধের প্রায় ৭২৮ মিটার পদ্মায় বিলীন হয়ে গেছে। জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের ছয়টি টাওয়ারের মধ্যে তিনটি টাওয়ার ভেঙে পড়ে গেছে। গত দুই দিনে মির্জানগর এলাকার একটি কবরস্থানের বেশির ভাগ অংশ বিলীন হয়েছে।

মির্জানগর কবরস্থান কমিটির কোষাধ্যক্ষ আশরাফুল ইসলাম বলেন, কবরস্থান আর টেকানো গেল না। এখন বসতবাড়ি কীভাবে রক্ষা হবে, সেটাই চিন্তা করছেন।
রোববার সকালে সাহেবনগর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা নদীতে ব্যাপক স্রোত বইছে। স্রোতের তোড়ে ভাঙা বেড়িবাঁধের পাশে গ্রামের দিকের জায়গাজমি ভেঙে যাচ্ছে। ভাঙন প্রতিরোধে ফেলা হচ্ছে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও টিউব। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দাকে বসতবাড়ির পাশে থাকা গাছপালা কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ বসতবাড়ির আসবাব সরিয়ে নিচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, রাতে তাঁদের ঘুম হয় না। পানির শোঁ শোঁ শব্দ। কখন যেন সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সাহেবনগর, মির্জানগর ও রানাখড়িয়া এলাকা চরম ঝুঁকির মধ্যে আছে। বেশ কিছু বসতবাড়ি, কৃষিজমি, কয়েকটি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা ভাঙনের মুখে।

পাউবো জানায়, ভাঙন ঠেকাতে ইতিমধ্যে প্রায় ৫৫ হাজার জিও ব্যাগ ও ৩ হাজার ২০০ টিউব ফেলা হয়েছে। নদীর গভীরতা বেশি ও তীব্র থাকায় জিও ব্যাগ ফেলার সঙ্গে সঙ্গে তলিয়ে যাচ্ছে। নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেছে। এতেই মহাসড়কের দিকে প্রতিনিয়ত পদ্মার ভাঙন এগিয়ে আসছে। আগামী নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত পানি কমতে থাকবে। এ সময়ের মধ্যে আরও অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ মিটারজুড়ে ভাঙনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে মহাসড়ক থেকে পদ্মার দূরত্ব থাকবে মাত্র ৩৫ মিটার। বর্তমানে মহাসড়ক থেকে পদ্মার দূরত্ব ৭০ মিটার।

কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আখতার বলেন, জাতীয় মহাসড়ক রক্ষার জন্য পাউবো কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়েও কথা হচ্ছে।

০ কমেন্ট

রিলেটেড পোস্ট

মতামত দিন


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.