নিজস্ব প্রতিবেদক
মেহেরপুর শহর এখন কিশোর গ্যাংয়ের দাপটে কাঁপছে। মাত্র ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী কিশোররা দিন দিন রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, দোকানপাট এবং ব্যক্তিগত বসবাসের জায়গায় হামলা চালাচ্ছে। নগরবাসী বলছেন, “এখন রাস্তায় বের হওয়াও ঝুঁকিপূর্ণ। দিনের বেলাতেই তারা ভাঙচুর চালাচ্ছে এবং গণমাধ্যমকেও হুমকি দিচ্ছে।” স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। পুলিশ সূত্র জানায়, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কিছু গ্যাং স্থানীয় রাজনীতির সহমতে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। এই রাজনৈতিক সংযোগ তাদের কর্মকাণ্ডকে আরও বেপরোয়া করে তুলেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, কিশোর অপরাধের মূল কারণ সামাজিক ও পারিবারিক ত্রুটি। দরিদ্র পরিবার, শিক্ষা ও বিনোদনের অভাব এবং প্রশাসনের উদাসীনতা মিলে তৈরি হচ্ছে একটি ‘অপরাধপ্রবণ প্রজন্ম’। সমাজকর্মীরা সতর্ক করে বলছেন, “যে কিশোরদের সঠিক দিকনির্দেশনা এবং সুযোগ দেওয়া হয় না, তারা সহজেই অপরাধের পথে পা বাড়ায়। এখনকার পরিস্থিতি একটি সময়বোমার মতো।”
অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কিশোর গ্যাং শুধু শহরের কেন্দ্রে সীমাবদ্ধ নয়, বরং শহরতলাসহ আশপাশের গ্রামেও ছড়িয়ে পড়ছে। স্কুলের মাঠ, খোলা জায়গা এবং পথচারীদের জন্য রাস্তাগুলো এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দোকানপাট ভাঙচুর এবং ছিনতাই বেড়ে যাওয়ায় শহরের অর্থনৈতিক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কিছু রাজনৈতিক গোষ্ঠীর ‘সহমত’ কিশোরদের অপরাধকে আরও স্বচ্ছন্দ করেছে। রাজনৈতিক গ্যাংয়ের সদস্যরা পুলিশের চোখ এড়িয়ে বিভিন্ন অপরাধ চালাচ্ছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন অপরাধ দমন করতে তৎপর না হওয়ায় কিশোরদের আচরণ আরও বেআরাম্ভিত হয়েছে। পুলিশের একটি সূত্র বলেছে, “পর্যাপ্ত মানববল এবং সরঞ্জাম না থাকায় প্রতিটি ঘটনা দ্রুত দমন করা সম্ভব হচ্ছে না। সামাজিক সংগঠনগুলোর সচেতনতা বৃদ্ধি ও কিশোরদের বিকল্প কার্যক্রমে অংশগ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণের সুযোগ থাকলে তাদের ভূমিকা আশাজনক নয়।। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষা, বিনোদন এবং সমাজসেবা কার্যক্রম কিশোরদের নৈতিক ও সামাজিক বিকাশে সহায়ক। তবে সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক সহমতের সঙ্গে নাগরিক ও সমাজকর্মীদের সম্মিলিত উদ্যোগ। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, কিশোর অপরাধ এখন শুধু শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়Ñএটি দ্রুত শহরতলি ও আশপাশের গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। যদি প্রশাসন ও রাজনৈতিক দল এই সমস্যা সমাধানে নীতি এবং বাস্তব পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
পূর্ববর্তী পোস্ট

