মেহেরপুরের গাংনীর মোল্লা ডায়াগনস্টিক ও কনসাল্টেশন সেন্টারের দালাল হিসেবে কাজ করছেন সরকারি ডাক্তার। এমনই অভিযোগ উঠেছে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. ফারুক হোসেনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, মোল্লা ডায়াগনস্টিক ও কনসাল্টেশন সেন্টারের রোগীরা টেস্ট না করালে করালে ডা. ফারুক হোসেন চিকিৎসা দিতে গড়িমসি করেন, এমনকি সরকারি টিকিট পর্যন্ত ছিঁড়ে ফেলেন। স্থানীয়দের ভাষায়, ডা. ফারুক যেন ‘টেস্ট বাণিজ্যের মহারথী’। হাসপাতালের রোগীদের মোল্লা ডায়াগনস্টিক ও কনসালটেশন সেন্টারে পাঠানোই যেন তাঁর নিত্যদিনের রুটিন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই ক্লিনিক থেকে তিনি মোটা অঙ্কের কমিশন গ্রহণ করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। গাংনীর নওয়াপাড়া গ্রামের গৃহবধূ ইসমতারা বলেন, গত মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) আমার মেয়ে আদিল অসুস্থ হয়ে পড়লে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। ডা. ফারুক হোসেন রোগী দেখার পর মোল্লা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করাতে বলেন। আমি পাশের রবিউল মেমোরিয়াল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেস্ট করালে তিনি রেগে গিয়ে আমার ৫ টাকার সরকারি টিকিট ছিঁড়ে ফেলেন।” আসমা আরও জানান, আমি তাঁর পায়ে ধরে চিকিৎসা দেওয়ার অনুরোধ করলে তিনি টেস্ট রিপোর্টের পিছনে ওষুধ লিখে দেন। এমন আচরণে আমি অপমানিত বোধ করেছি। ঘটনাটি মুহূর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। কমেন্টে গাংনীবাসী নানা ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন, ডা. ফারুক দীর্ঘদিন ধরে সরকারি হাসপাতালে বসে মোল্লা ডায়াগনস্টিক ও কনসার্টেশন সেন্টারের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই মন্তব্য করে বলেন, যে রোগী মোল্লায় টেস্ট করায় না, তার প্রতি ফারুক হোসেনের আচরণ পরিবর্তন হয়ে যায়। চিকিৎসা দিতে চান না, বরং রাগ দেখান। হাসপাতালে সরকারি দায়িত্ব পালন শেষে একই দিনে তিনি মোল্লা ডায়াগনস্টিক ও কনসাল্টেশন সেন্টারে পাশে নিজের চেম্বারে ভিজিট করেন। রোগীদের আগেই ওখানে বসিয়ে রাখেন। স্থানীয় সূত্র জানায়, মোল্লা ডায়াগনস্টিক ও কনসাল্টেশন সেন্টারে প্রতিটি টেস্টের বিপরীতে নির্দিষ্ট হারে কমিশন পান ডা. ফারুক হোসেন। ফলে সরকারি দায়িত্বের পাশাপাশি বেসরকারি লাভের পথ খুলে গেছে তাঁর জন্য। একজন স্থানীয় ক্লিনিক মালিক জানান, রোগী যদি অন্য কোনো ক্লিনিকে টেস্ট করায়, ডাক্তার রেগে যান। সরকারি ডাক্তার হয়েও তিনি নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিকের জন্য চাপ দেন, এটা খুবই অমানবিক। গাংনী পৌর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মনি বলেন,গাংনী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। সরকারি চিকিৎসক যদি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালি করেন, তবে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? এমন প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। অনেকেই বলছেন, সরকারি হাসপাতাল যদি চিকিৎসা না দিয়ে কমিশনের খপ্পরে পড়ে, তাহলে সরকারি সেবার প্রতি আস্থা নষ্ট হয়ে যাবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. ফারুক হোসেন বলেন, ৩০ সেপ্টেম্বর এক নবজাতক উদ্ধার হয়েছিল, আমরা সবাই তখন ব্যস্ত ছিলাম। টিকিট ছোট হওয়ায় বাধ্য হয়ে টেস্ট রিপোর্টের পেছনে প্রেসক্রিপশন লিখেছি। রোগী বা স্বজনের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করিনি। কিছু মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। গাংনী মোল্লা ডায়াগনস্টিক ও কনসাল্টেশন সেন্টারের স্বত্বাধিকারী মশিউর রহমান মোল্লার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি। গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল আজিজ বলেন, হাসপাতালে যেসব পরীক্ষা করা হয়, সেগুলোই ডাক্তারদের করতে বলা হয়েছে। এর বাইরে প্রয়োজন মনে হলে রোগীরা নিজেরাই পছন্দের ক্লিনিকে টেস্ট করাতে পারেন। এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেরপুরের সিভিল সার্জন ডা. এ.কে.এম. আবু সাইদ বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। স্থানীয়দের প্রত্যাশা, প্রশাসন দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। অন্যথায়, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিণত হবে বাণিজ্যের কেন্দ্রে যেখানে চিকিৎসা নয়, লাভই হবে মুখ্য।