Home » মেহেরপুরে শিশুস্বাস্থ্য: কার সিংহাসন বাঁচাতে গিয়ে শিশুর জীবন মরছে?

মেহেরপুরে শিশুস্বাস্থ্য: কার সিংহাসন বাঁচাতে গিয়ে শিশুর জীবন মরছে?

কর্তৃক Mahabobul Haque Polen
নিজস্ব প্রতিবেদক 44 ভিউ
Print Friendly, PDF & Email

আশরাফুন নাহার
মেহেরপুরের শীত শুরু হয়েছে, কিন্তু ঠান্ডা পড়ার আগেই স্বাস্থ্যব্যবস্থা ঠান্ডা হয়ে গেছে। শিশুরা হাপিয়ে উঠছে, নিউমোনিয়ায় কাঁপছে, হাসপাতালে জায়গা নেইÑআর রাষ্ট্র? রাষ্ট্র উদাসীন, অচেতন, যেন দুঃসময়ের দর্শক। যেন এই দেশের শিশুদের বাঁচানো তার দায়িত্ব নয়, দয়ামায়ার বিষয়।
জাতীয় পর্যায়ে প্রতিদিন ৩১০ জন শিশু ঠান্ডাজনিত রোগে হাসপাতালমুখী হচ্ছেÑএটা ভয়াবহ। কিন্তু মেহেরপুরে পরিস্থিতি আরও নির্মম। এখানে হাসপাতাল আছেÑকিন্তু সেবা নেই। ডাক্তার আছেÑকিন্তু পাওয়া যায় না। উন্নয়নের পোস্টার আছেÑকিন্তু শিশুস্বাস্থ্যে উন্নয়ন নেই। বছরের পর বছর একই সমস্যা চললেও কেউ নড়েচড়ে বসে না। যেন মেহেরপুর কোনো জেলার নাম নয়, রাজনৈতিক দৃষ্টিহীনতার গুমোট ঘর। শিশুরা কাশছে, হাঁপাচ্ছে, ঠান্ডায় কাঁপছেÑআর প্রশাসন ব্যস্ত উন্নয়ন উৎসব, সেলফি অনুষ্ঠান আর প্রটোকল শোতে। স্বাস্থ্যসেবার ভাঙা কাঠামো ঢাকতে যতটা তৎপর, তার এক-চতুর্থাংশ তৎপরতাও যদি হাসপাতালে দেয়া হতো, তাহলে আজ কমপক্ষে কিছু শিশু কষ্ট পেত না। সত্যিটা খুবই কঠিনÑমেহেরপুরে শিশুরা আজ যে অবহেলার শিকার, সেটি দুর্ঘটনা নয়; এটি পরিকল্পিত ব্যর্থতা। কার পরিকল্পনা? যার হাতে ক্ষমতা।
যার হাতে বাজেট। যারা ভোটের সময়ে কান পেতে থাকে, অথচ শিশুর কান্না তাদের কানে একটুও পৌঁছায় না। শীতকালে শিশুরা অতিরিক্ত ঝুঁকিতে থাকবেÑএটা নতুন তথ্য নয়। ধুলাবালি বাড়বে, দূষণ বাড়বে, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া বাড়বেÑএটা সবাই জানে। কিন্তু প্রশ্ন হলো: স্বাস্থ্যের দায়িত্বে যারা আছেন, তারা কী জানেন না? নাকি জানেন, কিন্তু করেন না? উত্তরটা খুবই সহজÑতারা জানেনও, করেনও; তবে শিশুর জন্য নয়, নিজেদের রাজনৈতিক আরাম বাঁচানোর জন্য। মেহেরপুরে আজও একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতাল নেইÑএটা জেলার জন্য লজ্জা নয়, বরং যাদের দায়িত্ব তারা লজ্জাহীনতার প্রতীক। রাজনীতিবিদরা উন্নয়নের বড় বড় গল্প বলবেন, কোটি টাকার প্রকল্পের কথা বলবেন, কিন্তু সদরের হাসপাতালে শিশুর জন্য একটি বেড বাড়াতে বছরের পর বছর লাগে। কেন? কারণ সেখানে কমিশন নেই, কাটমানি নেই, হইচই নেই। সন্তানের জীবন নিয়ে মেহেরপুরের মানুষ যখন দিশেহারা, তখন ক্ষমতাসীন মহলে সবচেয়ে জনপ্রিয় শব্দ হলোÑ“চাপ বেশি”, “সুবিধা সীমিত”, “বাজেট কম”। এই অজুহাতগুলো এতবার বলা হয়েছে যে এগুলো এখন এক ধরনের অবজ্ঞার ভাষায় পরিণত হয়েছে। শিশু মারা গেলেও প্রশাসন ঘুমায়, শিশু কষ্ট পেলেও জনপ্রতিনিধিরা নীরবÑকারণ তাদের সন্তান তো বিদেশে পড়ে, ভালো হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। আর মেহেরপুরের দরিদ্র শিশুর ভাগ্যে জোটে অপেক্ষা, অবহেলা আর মৃত্যু। এটাই আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার নগ্ন চেহারা। মেহেরপুরকে আর শান্ত হয়ে বসে থাকা চলবে না। এ জেলার মানুষকে প্রশ্ন তুলতে হবে: শিশুস্বাস্থ্যের মতো মৌলিক বিষয়েও যদি উন্নয়ন না হয়, তাহলে উন্নয়নের বড়াই কোথায়? জেলা শহরে একটি পূর্ণাঙ্গ শিশু হাসপাতাল গড়া, ডাক্তার নিয়োগ, শয্যা বৃদ্ধি, আইসিইউ স্থাপনÑএসব আর “আগামী দিনের পরিকল্পনা” হতে পারে না। এগুলো এখনই চাই; আজ চাই; এখনই দাবি তুলতে হবে। শিশুরা ভোট দিতে পারে নাÑকিন্তু তাদের বাঁচাতে হবে। আর যারা ক্ষমতায় আছেন, তারা যদি শিশুর জীবন বাঁচাতে ব্যর্থ হনÑতাহলে জনগণই নির্ধারণ করবে কারা ব্যর্থ, কারা দায়িত্বজ্ঞানহীন, আর কারা ক্ষমতার যোগ্য নয়। মেহেরপুরের শিশুদের আর অবহেলার কবরস্থানে ঠেলে দেবেন নাÑঅন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলুন। কারণ একটি শিশুর জীবন কোনো রাজনৈতিক ক্ষমতার চেয়ে হাজার গুণ বেশি মূল্যবান।

রিলেটেড পোস্ট

মতামত দিন


The reCAPTCHA verification period has expired. Please reload the page.