মেহেরপুরে পুলিশ বিভাগের নাম ভাঙ্গিয়ে অভিনব কৌশলে প্রতারণা করে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চাকরিচ্যুত এসআই (সাব-ইন্সপেক্টর) রুবেল ও তার স্ত্রী তানিশা ইয়াসমিন ইমা। তাদের প্রতারণার শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়েছেন মেহেরপুর সদর উপজেলার প্রায় দেড়শতাধিক পরিবার। প্রতারণায় সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে মেহেরপুর সদর থানার এসআই সুমন ( বর্তমানে ঢাকায় কর্মরত), মেহেরপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের আয়া আয়েশা খাতুন এবং পুলিশ লাইনের আরও মোঃ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চাকরিচ্যুত এসআই রুবেল প্রথমে স্থানীয়দের কাছে সরকারি রেশনের চাল, ডাল ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য অল্প দামে বিক্রি করে মানুষের মধ্যে বিশ্বাস অর্জন করেন। এরপর তিনি দাবি করেন, রেশনের পণ্য তুলতে হলে অগ্রিম টাকা প্রয়োজন। কিছু গ্রাহক অগ্রিম টাকা দেওয়ার পর প্রথম দফায় পণ্য পেয়ে যান। এভাবে এলাকায় প্রচার শুরু তেল ১৩০/১৫০ টাকা লিটার, মশুরের ডাল ১শত টাকা ও চিনি ১১০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে। এই বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে এসআই সুমন স্থানীয়দের আশ্বস্ত করতেন “তাদের কাছে টাকা দিলে কোনো ক্ষতি হবে না।” তারা মেহেরপুরের একটি স্থানীয় অভিজাত হোটেলে টাকা প্রদান কারিদের নিয়ে পাটিরও আয়োজন করে। সেই আয়াজনে এসআই সুমন ও সাহা আলমের উপস্থিতির প্রমাণ মিলে। কেউ সন্দেহ প্রকাশ করলে তিনি কথিত ডিও সাহ আলমের নাম ব্যবহার করে ফোন ধরিয়ে দিতেন ০১৬২৭-২৪৩৪৭৫ নম্বরে। এছাড়া পুলিশ লাইনের আর ও রফিক ও তার স্ত্রী ইমার ঘনিষ্ঠ ছিলেন । প্রায় রাতেই তারা রফিকের বাড়িতে যেতেন, এবং অনেক সময় পণ্য আনার নাটকও সাজাতেন। রেহানা মান্নান জানান, “প্রথমে হাসিনা এসে বলে, আপা আপনি অনলাইনে ব্যবসা করেন, এখানে করলে বেশি লাভ হবে। আমি ২৮ হাজার টাকা দিয়ে ২০০ লিটার তেলের অর্ডার দিই। প্রথমবার তেল পাই। পরে ৪০০ লিটার দিই, সেটাও পাই। এরপর পর্যায়ক্রমে ৬ লাখ ৮৪ হাজার টাকার অর্ডার দিলে সে আর মাল দেয়নি এখন টাকাও দেয়না। আমি থানায় অভিযোগ করেও কোন সুরহা পায়নি।” প্রতারিত দর্জি মোছাঃ শেলি খাতুন বলেন হাসিনা খাতুন ইমার মালামাল পাড়ায় বিক্রি করতো। এসআই সুমনও আশ্বাস দেয়। ইমা আমাকে আর ও রফিকের বাড়িতে নিয়ে যায় কয়েকবার। আমি বিশ্বাস করে আমার ভাই-বোনদের কাছ থেকে ১৭ লাখ টাকা দিয়েছি, এখন কিছুই ফেরত পাচ্ছি না। টাকা চাইতে গেলে ইমা তার মা আয়েশা বেগমসহ আমাকে মারধর করেছে।” এস আই সুমন বিষয়টি অস্বিকার করে বলেন তাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক ছিলোনা। মেহেরপুর পুলিশ লাইনের আরও রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতরনা করেছে শুনেছি। আমর কাছে রেহেনা মান্নান নামে এক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছিলো তাকে থানায় অভিযোগ করতে বলেছি ও রুবেলকে আমার কাছে আসতে নিষেধ করে দিয়েছি। তবে আমি কোন আইনি পদক্ষেপ নিয়নি। কথিত ডিও এবং পুলিশের চাকুরি চ্যুত সদস্য শাহ আলম বলেন, আমি রুবেলের কাছে টাকা পেতাম তাই কথা বলতাম, আমি ডিও না আর কেন আমার নাম ভাঙ্গিয়েছে আমি বলতে পারবো না। পুলিশর চাকরিচ্যুত এসআই রুবেল বলেন, আমরা ব্যাবসা করেছি , ব্যাবসায় লোকসান হওয়ার কারনে কিছু লোক আমাদের কাছে টাকা পায়। আমরা অচিরেই বসে তাদের সাথে টাকার সমাধান করে ফেলবো। যখন রুবেল-ইমা কোনো পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দেন তখন প্রতারণার বিষয়টি ফাঁস হয় । এরপর সবাই টাকার জন্য চাপাচাপি করলে এসআই সুমন মেহেরপুর থেকে বদলি হয়ে ঢাকায় চলে যান। প্রতারিত ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা ছাড়া এত বড় প্রতারণা সম্ভব ছিল না। তারা দ্রুত প্রতারকদের গ্রেপ্তার ও ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগী দেড় শতাধিক পরিবার, স্থানীয় প্রশাসনের নীরব ভূমিকার অভিযোগ
মেহেরপুরে চাকরিচ্যুত এসআই রুবেল দম্পতির কোটি টাকার প্রতারণা

