নিজস্ব প্রতিবেদক
সারা দেশের মতো মেহেরপুরেও ভেজাল, নিম্নমান ও নিষিদ্ধ ওষুধের অবাধ বিক্রি থামেনি। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর একাধিক ওষুধের নিবন্ধন বাতিল করলেও ফার্মেসিগুলোতে সেসব ওষুধ এখনও সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, জেলা শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মুদি দোকান, পান ও বিড়ির দোকানেও এসব ক্ষতিকর ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিশুদের বদহজম ও পেটে ব্যথানাশক হিসেবে ব্যবহৃত ‘গ্রাইপো’ ওষুধ বহু আগেই নিষিদ্ধ করা হলেও মেহেরপুর শহরের কয়েকটি দোকানে এখনো বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে খুলনা ও ঢাকার মিটফোর্ড মার্কেট থেকে সংগৃহীত নানা নিম্নমানের ওষুধও জেলায় সরবরাহ হচ্ছে। ফার্মেসির কিছু অসাধু মালিক আসল ওষুধের প্যাকেটের আদলে ভেজাল ওষুধ বাজারজাত করছেন। যেমন, মেট্রোনিডাজল-৫০০ মি.গ্রা ট্যাবলেট আসলটির দাম ১ টাকা ৩০ পয়সা হলেও ভেজাল সংস্করণ মাত্র ২০-২৫ পয়সায় কিনে একই দামে বিক্রি করা হচ্ছে। কিটোরোলাক ব্যথানাশক আসলটির দাম প্রতিটি ১০ টাকা, অথচ ভেজালটি ১ টাকায় কিনে ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্যাটগাড সেলাই সুতো আসলটির দাম ২৫০-৩০০ টাকা হলেও ভেজালটি মাত্র ৪০-৫০ টাকায় কিনে আসল দামে বিক্রি হচ্ছে। সেফট্রিএকজন ইনজেকশন-১ গ্রাম ৬০ টাকায় কিনে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ভেজাল পণ্য। এ ছাড়া দামি কোম্পানির মোড়ক নকল করে বাজারজাত করা হচ্ছে ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, এন্টিবায়োটিক ও যৌন উত্তেজক নানা ওষুধ। মেহেরপুর ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধির একজন বলেন, “প্রায় অর্ধশতাধিক কোম্পানি সরাসরি প্রতারণা করে ওষুধ বিক্রি করছে। শুধু নিম্নমানের কোম্পানিগুলোই নয়, অনেক প্রতিষ্ঠিত ডাক্তারও এতে জড়িত। তারা নগদ টাকা ও বিভিন্ন উপঢৌকন নিয়ে এসব কোম্পানির ওষুধ রোগীদের প্রেসক্রিপশনে লিখছেন।” তার দাবি, এসব ভেজাল ওষুধ খেয়ে মানুষের শতকরা ২৫ ভাগও উপকার পাচ্ছেন না। বরং দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন সাধারণ রোগীরা। মেহেরপুর ড্রাগ সুপার জানান, বাজারে থাকা ওষুধের প্রায় ২০ শতাংশই মানহীন। কিন্তু তদারকি না থাকায় এ ধরনের প্রতারণা বন্ধ হচ্ছে না। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ভেজাল ওষুধের এ বাজার মূলত ঢাকার মিটফোর্ড ও খুলনার হেরাজ মার্কেট থেকে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। সেখান থেকে মেহেরপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে নিম্নমানের এসব ওষুধ। চিকিৎসকরা সজিবুল হক ব জানান, রোগীরা বাড়তি ওষুধ সেবন করেও সুস্থ হচ্ছেন না। এতে চিকিৎসা ব্যয় যেমন বাড়ছে, তেমনি রোগের জটিলতাও বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কঠোর নজরদারি ছাড়া এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়।
পূর্ববর্তী পোস্ট